তাবলিগের ৩২১ বিদেশিকে আনা হল দুই মসজিদে

ভারতে তাবলিগ জামাতের সমাবেশ থেকে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে তাবলিগের প্রচারে বাংলাদেশে আসা ৩২১ বিদেশিকে ঢাকার দুটি মসজিদে জড়ো করে রাখা হয়েছে।

রিয়াজুল বাশারকামাল তালুকদার ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2020, 04:30 PM
Updated : 4 April 2020, 03:13 AM

পুলিশ বলছে, কোয়ারেন্টিনে না থাকলেও তাবলিগের এই বিদেশিদের মসজিদ থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

এদের মধ্যে ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদে আছেন ১৯১ জন। এই মসজিদটিই বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

বাকি ১৩০ জনকে জড়ো করা হয়েছে যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টি মদিনা জামে মসজিদে।

তাবলীগের বিবাদমান দুটি অংশের মধ্যে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারী ১৩০ জনকে মদিনা মসজিদে রাখা হয়েছে বলে জানান যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মো মাজহারুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মদিনা মসজিদে বড় হওয়ায় ১৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন  স্থান থেকে এনে সেখানে আলাদা রাখা হয়েছে। তারা সুস্থ আছেন।

কাকরাইল মসজিদে রাখা ১৯১ জন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী।

রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে কাকরাইল মসজিদে কাউকে ঢুকতে ও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।”

তিনি জানান, কাকরাইল মসজিদে বিদেশিদের পাশাপাশি তাদের দেখাশোনার জন্য ৩০ থেকে ৪০ জন রয়েছেন। এছাড়া একটি মাদ্রাসার ৪০ জন শিক্ষার্থীও সেখানে রয়েছেন।

তাবলিগ জামায়াতের অন্যতম বড় কেন্দ্র বাংলাদেশ। এই সংগঠনের সময়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মিলন হয় ঢাকার উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে।

এবারের বিশ্ব ইজতেমার দৃশ্য

তাবলিগ জামাতের সদস্যরা ইসলামের প্রচারে ১০-১৫ জনের দল নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেরিয়ে পড়েন, এর ৪০ দিন পূর্ণ হলে তাকে বলা হয় এক ‘চিল্লা’। তাবলিগের এই দাওয়াতি কার্যক্রম লম্বা সময়ের জন্যও হয়।

এরা একত্রিত হয়ে চলাফেরা ও খাবার গ্রহণ করেন। অধিকাংশ একই একই থালায় সবাই খান।

মহামারীর এই সময়ে সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের একটি সমাবেশ থেকে অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত দুদিনের পরীক্ষায় ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া ৬৫০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এরপর প্রায় দুই হাজার মুসল্লিকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

তার আগে মালয়েশিয়ায় তাবলিগের একটি সমাবেশ থেকে সে দেশে অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমান সময়ে তাবলিগের কার্যক্রম নিয়ে জানতে চাইলে শায়খ যাকারিয়া (র.) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সময় ‘মোস্তাহাব’ আমল করার প্রয়োজন নেই।”

গণজমায়েত করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাওয়াত দেওয়াকে মোস্তাহাব আমল বলে। কোভিড-১৯ রোগ ছোঁয়াচে বলে এই ধরনের কাজ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে মসজিদ এখনও বন্ধ না হলেও খোদ সৌদি আরবে মক্কা-মদিনার মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের জামে মসজিদের খতিব মুফতি সাইদ বলেন, “যেসব তাবলীগ জামাত বের হয়েছিল, আমরা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি ফিরে আসতে। যারা গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আসতে পারনেনি, তাদেরকে মসজিদ কমিটিকে দেখভাল করতে বলেছি এবং আলাদা আলাদা রাখতে বলেছি।”

মোহাম্মদ শাওন নামে পুরান ঢাকার একজন ব্যবসায়ী ১২০ দিনের জন্য ‘চিল্লায়’ গিয়েছিলেন। তবে করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে ৮৫ দিন পর তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।

শাওন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বশেষ ভোলার লালমোহনের ‘মারকাজ’ মসজিদে ছিলেন তারা। কিন্তু দলের ১৫ জনকে নিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়েছে।

এই সময়ে তাবলিগের প্রচার বন্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাবলিগ জামাত আমরা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করি না। তারপরও (বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে) দেশের আলেম–ওলামারা তাদের মতামত দিয়েছেন।”

১৯৫২ সালে কাকরাইল মসজিদকে বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র বা মারকায করা হয়।

১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমা। এতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেন।

তাবলিগ জামায়াত মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে সব সময় তাদের ২০ হাজারের বেশি সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতেন। তবে কয়েক বছর আগে সংগঠনে বিভক্তি আসার পর সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে।