মশক নিধন ও ডেঙ্গু মোকাবেলায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ

মশক নিধনের পাশাপাশি সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 12:06 PM
Updated : 2 April 2020, 12:06 PM

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সরকারি ভবন, লেক, পার্ক, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষ। আর মশা মারার কাজ করবে সিটি করপোরেশন।

“দীর্ঘ ছুটির সময় বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে এডিস মশার উৎপত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।”

সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লেকগুলো পরিস্কার করে দিলে আমরা ওষুধ ছিটাবো, তাহলে মশা মরবে। এটাই একসাথে কাজ করার সময়, আমি ১৫ মে দায়িত্ব পাব, কিন্তু এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান জানান, তিনটি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে যে কেউ এসব কীটনাশক কিনতে পারে। এছড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সরাসরি কীটনাশক আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সভায় জানানো হয়, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশক নিধন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মশক নিধনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো

>> মশার উৎপত্তিস্থল যেমন শহরের খাল, নালা, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী অপরিচ্ছনন্ন স্থান, কাঁচা বাজার, সরকারি অফিস ও আবাসিক স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

>> এডিস মশার বিস্তাররোধে অফিস ছুটিকালীন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের টয়লেটের কমোড অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে।

>> নির্মাণাধীন ভবন এবং যেসব সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে না বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাবে সেসব ব্যক্তি ও স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী বার বার জরিমানা করতে হবে।

>> প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে সাব-কমিটি গঠন করে তাতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ২০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অর্ন্তভূক্ত করে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে।

>> মশকনিধন এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতের স্বার্থে মন্ত্রণালয়, সব সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সিটি করপোরেশনগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।

>> সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ হিসেবে এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু   মোকাবেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা-সরকারিপত্র পাঠানো হবে।

>> কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক উদ্যোক্তা ও আমদানীকারককে কীটনাশক আমদানীর সুযোগ দিলে তা বাজারে সহজলভ্য হবে। এর ফলে মানুষ নিজ উদ্যোগে হস্তচালিত মেশিন দিয়ে নিজের আঙ্গিনার মশক নিধন করতে পারবে।

>> সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে।

>> ঢাকার খাল ও নালাগুলো একযোগে পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে এবং স্থাপনাগুলো পরিচ্ছন্ন করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ, রাজউক এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিতে হবে।

>> বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘমেয়াদী ছুটির কারণে জনসাধারণ ও যানবাহনের চাপ কম আছে। এই সময় পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিস্কার করার সুযোগ সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।

>> স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের চলমান পরিচ্ছন্নতা অভিযান সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকার ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।