করোনাভাইরাস: দেশে আক্রান্ত বেড়ে ৫৬

দেশে আরো দুই জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬ জন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 06:46 AM
Updated : 20 Oct 2021, 11:00 AM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান বৃহস্পতিবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই ৬ জনে রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নতুন করে ২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন আক্রান্ত দুজনই পুরুষ; একজনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আরেকজনের বয়স ৭০ এর বেশি।

তারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন জানতে চাইলে হাবিব বলেন, “আমরা এখনও তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে পারিনি। ইনভেসটিগেশন করছি।”

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫ জনকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আইসোলেশনে আছেন ৭৮ জন। সারা দেশে এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৬ হাজার ৭০০ জন।

বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরলেও অনেকের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন – একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, “যে সংখ্যায় এসেছে তাদের সবাই কোয়ারেন্টিনে থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। যারা নতুন আসছে, তাদের কোয়ারেন্টিনে নিচ্ছি। যাদের ১৪ দিন হয়ে গেছে, তাদের কোয়ারেন্টিন মুক্ত করছি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক জানান, সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ১ হাজার ৭৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে চিকিৎসকদের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০টি পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ধীরগতি নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এমআইএস পরিচালক বলেন, “আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। মহাপরিচালক মহোদয় দেশের সব বিভাগের পরিচালকদের জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ২টা করে নমুনা পাঠাতে হবে। আগামীকাল অন্তত এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হবে।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে দেশের সরকারি হাসপাতাগুলোতে ৫০০ ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। আমদানি পর্যায়ে রয়েছে আরও তিনশ ভেন্টিলেটর। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ৭০০ ভেন্টিলেটর।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ করা হয়েছে।

ঢাকায় মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ), আইইডিসিআর ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআর বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ এর পিসিআর টেস্ট।

ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল, রংপুর মেডিকেল ও রাজশাহী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে চান তারা।

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সামাজিক সংক্রমণ পর্যায়ে পৌঁছে কি না তা নিয়ে উদ্বোগ রয়েছে অনেকের মধ্যে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট খন্দকার মাহবুবা জামিল বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, দেশে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হয়েছে, তবে তা ‘মৃদু’ পার্যায়ে।

সরকার এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রুখতে এখন সারা দেশের জনগণকে ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এতদিন কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফ করে এলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায়। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো—সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহও এদিন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

মাস্ক বিভ্রাট

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরবরাহ করা মাস্ক এন-নাইনটি ফাইভ ‘ছিল না’ জানিয়ে শহিদ উল্লাহ ব্রিফিংয়ে বলেন, এ নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে সেসব মাস্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে ‘এন-নাইনটি ফাইভ লেখা থাকলেও ভেতরে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালককে ফোন করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ে বলেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল।

তিনি বলেন, সার্জিক্যাল মাস্ক দেশেই তৈরি হয়, এন-নাইনটি ফাইভ মাস্ক আমদানি করতে হয়।

“জরুরিভাবে মাস্ক দিতে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় আমরা দেখেছি, নরমাল মাস্কের জায়গায় ভুলবশত এন-নাইনটি ফাইভ লেখা রয়েছে। আমরা বলিনি যে আমরা এন-নাইনটি ফাইভ মাস্ক সরবরাহ করছি।

“যে সমস্ত জায়গায় এটা ভুলবশত গিয়েছে সে সমস্ত হাসপাতালের পরিচালকবৃন্দের সাথে কথা বলে দেখেছি যে এটা এন-নাইনটি ফাইভ মাস্ক নয়। এটা সাধারণ মাস্ক।”

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এন নাইনটি ফাইভ মাস্ক পরা জরুরি বলে পিপিই নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

সিএমএসডি পরিচালক বলেন, এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার দেশের হাসপাতালগুলোতে তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করছে, যেগুলোকে ‘নন–উভেন’ মাস্কও বলা হয়।

“আমাদের এন-নাইনটি ফাইভ মাস্ক বিদেশ থেকে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। হয়ত আগামী তিন চার দিনের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ মাস্ক চলে আসবে। ।

“এটা আসার পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যথাযথ নির্দেশনায় আমরা বিশেষায়িত হাসপাতাল ও যে সব স্থানে পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে, সেখানে পৌঁছে দেব।”

সিএমএসডি পরিচালক জানান, মাস্কের জন্য বাংলাদেশ এবার আর চীনের উপর নির্ভর করছে না। পিপিইর জন্য সিএমএসডি দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরই ভরসা রাখছে।

এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০টি পিপিই বিতরণ করেছে, মজুদ রয়েছে ৫৬ হাজার ১১০টি। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০হাজার পিপিই স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।