কারওয়ান বাজারের চারুলতা রেস্টুরেন্টের মালিক লোকমান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, পরিস্থিতি বুঝে তারা এখন পার্সেল বিক্রির উপরই জোর দিচ্ছেন।
চালু এই রেস্তোরাঁটি একদিনও বন্ধ হয়নি; তবে ২৭ মার্চ থেকে চার দিন ভেতরে বসে কাউকে খেতে দেওয়া হযনি।
লোকমান বলেন, ওই চার দিন শুধু পার্সেলে খাবার বিক্রি করেছেন তারা। মঙ্গলবার থেকে শর্ত সাপেক্ষে বসে খাবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
শর্ত কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দূরত্ব (সংক্রমণ এড়াতে) রেখে বসতে দেওয়া হচ্ছে। একজন এক টেবিলে খেতে পারবেন। তার ছাড়া প্লেট এবং গ্লাস যা দেওয়া হয়, তা ওয়ানটাইম।”
চারুলতার নিচেই হাজীর বিরিয়ানী নামের খাবার দোকানের ব্যবস্থাপক মিজানুর জানালেন, তারাও এখন পার্সেল বিক্রিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন, ক্রেতাদের হোটেলে বসে খেতে নিরুৎসাহিত করছেন।
এরকমই একটি ভাত-রুটির দোকানের মালিক আল আমীন বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েকদিন বন্ধ রাখার পর মঙ্গলবার থেকে দোকান খুললেও কাউকে বসে খেতে দিচ্ছেন না। সব পার্সেলে বিক্রি করছেন।
“নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের ভাতও পার্সেলে। প্যাকেটে করে দিয়ে দিই।”
পাশের ডাব বিক্রেতা সেলিম বললেন, “আগে হোটেলে বইসা খাওয়ান লাগত। এখন প্যাকেটে করে আইনা বাইরে বইসা খাই।”
এসব দোকানের গ্রাহক রিকশাচালক ও দিনমজুররা। তবে তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আল আমীনের বিক্রি কমে গেছে।
ঢাকার অন্য স্থানেও একই অবস্থা। মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের পাশে টাউন হলে শওকত তেহারী নামের এই খাবার দোকানে ম্যানেজার মো. সায়েম জানালেন, মঙ্গলবার থেকে দোকান খুলেছেন, পার্সেলই বেশি বিক্রি করছেন। তবে বিক্রি কম বলে রান্নার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যবসায় বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে জানাচ্ছেন রেস্তোরাঁ মালিকরা।
মোহাম্মদপুরের জান্নাত হোটেল থেকে শুরু করে শুক্রাবাদ-পান্থপথ হয়ে ফার্মগেইট এলাকায় নিউ স্টার হোটেল, লাভলী হোটেল, প্রিন্স রেস্তোরাঁসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো খাবারের হোটেল চোখে পড়লেও প্রায় সবটাই বন্ধ দেখা গেছে।
হোটেল মালিক সমিতির মহাসচিব রেজাউল করিম সরকার রবিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রশাসনের মৌখিক নিষেধাজ্ঞায় হোটেল বন্ধ করেছিলেন তারা, এখন সীমিত আকারে চালু করতে বললেও কর্মচারীরা গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় হোটেল খোলার জো নেই। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মচারীরা আসতে পারছে না।
“এ পরিস্থিতি বেশি দিন চললে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫৫হাজার হোটেল ব্যবসায়ী পথে বসবে,” বলেন রবিন। তাদের রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন ক্রেতার গাড়িতে কাঁচা সবজি বা অন্যান্য পণ্য তুলে দিয়ে বেশ আয় করতেন মো. হান্নান। এখন সেই অবস্থা নেই।
তাহলে কী করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আশেপাশের বাসা-বাড়িতে বাজার পৌঁছে দিয়ে আসেন।
পান্থপথের একটি চারতলা বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে হান্নানের সঙ্গে কথা হয় বসুন্ধরা সিটির সামনে।
সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তিত হান্নান বলেন, এখন আয় কমে গেছে। কারওয়ান বাজারে লোকজন কম আসছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর গরিব মানুষদের প্রতিদিনের খাবারও পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য অনেককে দেখা গেছে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে খাবারের অপেক্ষায় থাকতে।
এখানে অপেক্ষার কারণ জানতে চাইলে জহুরুল বলেন, এলাকার এক লোক তাকে বলেছে যে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে গেলে চাল দেবে। সে আশায় সকাল থেকে বসে আছেন তিনি।
এর মধ্যে খুরশিদা ও সুলতানা বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। নার্গিস কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি বোতলের ছিপি তৈরির প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক। করোনাভাইরাস সঙ্কটে তারা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। থানায় পুলিশ খাবারের প্যাকেট দেবে, সেই আশায় এসেছেন তারা।