করোনাভাইরাস: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল ছাড়াই গ্রেডিং

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের গ্রেডিং করতে যাচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2020, 03:03 PM
Updated : 1 April 2020, 03:03 PM

চলতি সেমিস্টারের ক্লাসসহ ২৫ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম বাকি থাকলেও আর কোনো ক্লাস এমনকি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের এ পর্যন্ত কোর্সওয়ার্কের ভিত্তিতে গ্রেড দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, এটা নিয়মের লংঘন। কারণ অ্যাকাডেমিক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ‘একক সিদ্ধান্তে’ ওই নোটিস জারি করেছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাংয়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বলছেন, ওই সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন তারা। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হতে পারে।

আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তারপরও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কেন ‘ব্যস্ত’ হচ্ছে, তা তাদের ‘বোধগম্য’ নয়।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় সংক্রমেণ এড়াতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রথমে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা দেওয়া হলেও পরে তা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

সরকার গত ২৪ মার্চ ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সেদিনই রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর ভিডিও কনফারেন্স বা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তা আর হয়নি।

“এরপর হঠাৎ করেই নোটিস দেওয়া হয় যে ক্লাস নেওয়ার দরকার নেই, অনলাইন ক্লাসও হবে না, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই গ্রেডিং করতে বলা হল।”

উপাচার্য ‘একাই’ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাবি করে সেই শিক্ষক বলেন, “অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে এ সিদ্ধান্ত হয়নি, এটা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের লংঘন।”

একটি সেমিস্টারে ১২-১৩ সপ্তাহ ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও চলতি সেমিস্টারে নয় সপ্তাহ ক্লাস হয়েছে জানিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ক্লাস, ক্লাস টেস্ট এবং ক্লাস অ্যাসাইমেন্ট বাকি আছে।

“এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হবে না। মিডটার্ম পরীক্ষা, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট যা নেওয়া হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই গ্রেডিং করতে হবে।”

এই সেমিস্টারে কেউ যাতে ফেল না করে সে বিষয়েও শিক্ষকদের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্র্যাকের আরেকজন শিক্ষক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা কোনোভাবেই ঠিক না। অ্যাকাডেমিক কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ছাড়া হতে পারে না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষক বলেন, “পরিস্থিতি যখন নরমাল হবে তখন কিছু ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নিলেই হত। শিক্ষার্থীদের আতঙ্কমুক্ত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিসে বলেছে। কিন্তু এটাতে তো তারা আতঙ্কমুক্ত হল না, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আতঙ্কিত, অনেকে সাফার করবে। অনেকে ক্লাস টেস্টে খারাপ করলেও ফাইনালে তা কাভার করে নেয়। এখন সেই সুযোগ থাকবে না।”

ওই শিক্ষক জানান, তার কোর্সের ২৫ শতাংশ সিলেবাস এখনও বাকি। চারটি ক্লাস টেস্টের মধ্যে তিনটি নিতে পারলেও বেশ কয়েকটি অ্যাসাইমেন্ট বাকি আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই এ সিদ্ধান্তে নখোশ হলেও কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকের ভাষ্য।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের একটা পরামর্শ ছিল যে এই সময়ে পারলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার মধ্যে থাকে।

“তবে এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে বা কী করতে হবে- আমারা কোনো গাইডলাইন দিইনি। এত আগে থেকে তারা (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়) কেন এই সিদ্ধান্ত নিল? ক্রাইসিস কেটে গেলে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারবে, অনেক কিছুই করতে পারবে।”

১১ এপ্রিলের পর অফিস সচল হলে ইউজিসির যে সদস্য এবং অন্য কর্মকর্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করেন তাদের সঙ্গে বসে একটি গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হবে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই নোটিস প্রসঙ্গে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, “একটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল, অফিস খুললেই তো একটা গাইডলাইন আসত। তারা মন্ত্রণালয় বা আমাদের সাথেও আলাপ করে নিতে পারত।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। … এই সিদ্ধান্তের পরে আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক ফিডব্যাক পাচ্ছি। সম্ভবত এটি রিভিউ হবে, শিগগিরই একটি সভা হবে।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি সেমিস্টারের দুই সপ্তাহ ক্লাস বাকি আছে বলে জানান তিনি।