এই ‘প্রিন্স’ কোনো মানুষ নয়। গাঢ় খয়েরি রঙা শরীর আর মাথা-ঘাড়ে ঘন কেশরের তাগড়া একটি ঘোড়া। ঢাকার মালিবাগ, শান্তিবাগ ও গুলবাগের বাসিন্দাদের অতি পরিচিত ‘প্রিন্স’ দেখতেও প্রিন্সের মতো, তার চলাফেরাও রাজকীয়।
অলিগলি ঘুরে বেড়ানো আর কোনো বাসা-বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের দেওয়া খাবার খাওয়া এটাই ছিল তার প্রতিদিনের কাজ। ছেলে-বুড়োর সবারই প্রিয় ‘প্রিন্স’।
‘প্রিন্স’ও কি তাহলে বোঝে ক্রান্তিকাল? উত্তর মিলল শুক্কুর আলীর কাছ থেকে।
“দেখেন, প্রিন্স প্রাণী হলেও কি রকম বুঝ-জ্ঞান তার। নিজে থেকে এখন সে বের হয় কম, অলিতে-গলিতে সেভাবে চলাচল করে না,” বলেন গুলবাগ পাওয়ার হাউজের কাছের এই দোকানি।
শুক্কুর আলী বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে মালিবাগ-গুলবাগের অলি-গলির দোকান-পাট প্রায় বন্ধ, মানুষজনের চলাচল নেই, রিকশা চলে না। সেজন্য হয়ত প্রিন্সও বুঝতে পেরেছে লকডাউন। প্রাণী হলেও সব কিছু বোঝে।”
মর্ডান এডুকেশন হোমের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আল-আমীন শিফাতের খুব প্রিয় ঘোড়াটি। ‘প্রিন্স’কে বন্ধু ভাবতেই পছন্দ করে।
“মি. প্রিন্স ভিষণ ভালো, আমার প্রিয় বন্ধু। টাট্টু ঘোড়ার মতো দেখতে, সুইট। সবসময় ক্লিন থাকে প্র্রিন্স। আমি তাকে রুটি খাওয়াই। রুটি ছাড়া বিস্কুট দিলে সে খাবে না। সব কিছু খায় না। রাস্তায় পড়ে থাকা খাবার খায় না। ড্রেনের পানি খায় না, ভালো পাত্রে দিলে সেই পানি সে খায়।”
এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০/২৫ বছর আগে এক ব্যক্তি দুইটি অর্প বয়সের ঘোড়া নিয়ে গুলবাগে এসেছিলেন। একটি ঘোড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটিকেই রেখেই চলে যান ওই ব্যক্তি। ফেলে যাওয়া সেই ঘোড়াটিই ‘প্রিন্স’। তখন থেকে সে স্বাধীনভাবেই বেড়ে উঠেছে।
আবু জর গিফারী কলেজের সামনের অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদা কানিজ বলেন, “প্রিন্স যেমন দেখতে সুন্দর তেমন তার চেহারা। যখন কলেজ রোডের এই পথ দিয়ে যায়, আমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা রুটি দিলে খেয়ে চলে যায় ঘাড়ের কালো কেশর উঁচু করে।
“সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমাদেরকে ঘরে থাকতে বলেছে। কিন্তু প্রিন্সকে কেউ আটকে রাখেনি, বারণও রাস্তায় বের হতে। নিজে থেকে মাঠে অবস্থান করছে। রাস্তায় তাকে আগের মতো দেখা যায় না,” বলেন শান্তিবাগের হকার কলিমুল্লাহ।