বুকের এক্সরে থেকে কভিড-১৯ যাচাই সম্ভব, বলছেন ড্যাফোডিলের গবেষকরা

কিট সঙ্কট নিয়ে আলোচনার মধ্যে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির মাধ্যমেনভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তে সাফল্যের দাবি করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2020, 08:12 AM
Updated : 29 March 2020, 02:40 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ, এআই ইউনিট, ড্যাফোডিল গ্রুপের কার্ডিও-কেয়ার জেনারেল অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালের গবেষক ও চিকিৎসকদের সম্মিলিত চেষ্টায় তৈরি করা এই পদ্ধতিতে ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল পাওয়া গেছে বলে তাদের ভাষ্য।          

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে যাওয়ার আগে আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার হবে।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আল্লাইয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চীন থেকে সারা বিশ্বে যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে, তখনই আমাদের মাথায় আসে এআইভিত্তিক (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) একটি সিস্টেম দাঁড় করাব, যাতে টেস্টিং কিটের সঙ্কটে রোগীদের আর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে না হয়।”

সেই ভাবনা থেকে আড়াই মাস আগে এই গবেষণা শুরু করেন তারা। সফটওয়্যার তৈরির পর তা যাচাই করতে তারা ব্যবহার করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পাওয়া কোভিড-১৯ রোগীর ডেটা।

আল্লাইয়ার বলেন, “ওয়ার্ল্ডওয়াইড পেশেন্টদের ডেটা, মানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেই তো অনেক রোগীর চেস্ট এক্সরে রিপোর্টের ডিজিটাল কপি আছে। আমরা ওপেন সোর্স ব্যবহার করে এই সিস্টেম পরীক্ষা করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও আমরা কোভিড-১৯ সন্দেহ করা হচ্ছে এমন রোগীদের এক্সরে কপি পেয়েছি। সেগুলো অ্যানালাইসিস করে আমরা সফটওয়্যার ট্রেইন করেছি।”

বাংলাদেশে এখন নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষা হয় কেবল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তত্ত্বাবধানে। সেখানে নমুনা হিসেবে কফ বা লালা নিয়ে যে পরীক্ষা হয় তার নাম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর।

কিন্তু ওই পরীক্ষার জন্য বিশেষ যে কিট দরকার তার সঙ্কেট থাকায় এতদিন চাইলেই যে কারও পরীক্ষা করা সম্ভব ছিল না। সে কারণে সরকার কিট আমদানির পাশাপাশি আরও কয়েকটি হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

যেভাবে পরীক্ষা হবে

সহযোগী অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আল্লাইয়ার জানান, এ পরীক্ষার জন্য তাদের লাগবে রোগী অথবা সম্ভাব্য রোগীর বুকের এক্সরে অথবা সিটি স্ক্যানের ডিজিটাল ইমেজ। তাদের তৈরি করা সফটওয়্যার সেই ইমেজ বিশ্লেষণ করবে। এরপর পুরনো ডেটার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে এআই প্রযুক্তি সিদ্ধান্ত দেবে। 

এ পদ্ধতিতে তিন ধরনের উত্তর পাওয়া সম্ভব। ১. ফুসফুস স্বাভাবিক বা নিরোগ অবস্থায় আছে, ২. অন্য কোনো ধরনের সংক্রমণ হয়েছে, অথবা ৩. ওই ব্যক্তির ফুসফুসে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হয়েছে। 

“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেটা ব্যবহার করে আমরা দেখেছি, ৯৬ শতাংশ পযর্যন্ত সঠিক রেজাল্ট এখানে পাওয়া সম্ভব।”

এই সফটওয়্যারের সেবা পাওয়ার জন্য একটি ওয়েবসাইট (http://www.helpus.ai/) খুলেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সেই ওয়েবসাইটের ‘স্টার্ট স্ক্রিনিং’ ট্যাবে ক্লিক করলে রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভেসে আসবে নানা প্রশ্ন। সেসব প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ, কার্ডিও-কেয়ার জেনারেল অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসকরা ঠিক করবেন এসব উপসর্গ কোভিড-১৯ এর কিনা।

যদি কারও মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে বলে ধরা পড়ে, তবে তাকে হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকরা।

ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের একটি ফরম থাকবে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে চিকিৎসক চেস্ট এক্সরের ডিজিটাল ইমেজ ড্যাফোডিলের ওই ওয়েবেসাইটে আপলোড করতে পারবেন।

এরপর দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হবে, ওই রোগী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না।

শেখ আল্লাইয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইতোমধ্যে তাদের এই পরীক্ষা ব্যবস্থা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেখানো হয়েছে।

“সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আমরা এই সিস্টেমটি নিয়ে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করব। তবে ওই হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সরকার অনুমোদিত হতে হবে।”

যারা ড্যাফোডিলের গবেষকদের সেই প্রেজেন্টেশন দেখেছেন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিভাগের লাইন ডিরেক্টর হাবিবুর রহমান একজন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তারা এটি নিয়ে এসেছে। আমরা দেখেছি। কিন্তু তারা যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার করার কথা বলছে, তাতেও কিন্তু রোগীকে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে।

“তারা আগে হাসপাতালে যাবেন। স্ক্যান করাবেন, তারপর সেটাকে আবার ডাক্তারের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে। যারা একেবারে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের তো দ্রুত তথ্য পেতে হবে।”

হাবিবুর রহমান বলেন, “যাই হোক, এরকম উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে এ বিষয়টি নিয়ে।”