মন্দের ভালো, সাফ-সুতরো ঢাকা

শত চেষ্টাতেও যা করা যায়নি, চোখে দেখা যায় না এমন একটি মারাত্মক জীবাণুর আতঙ্কই বদলে দিয়েছে রাজধানীর পথঘাটের চেহারা।

সুমন মাহমুদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2020, 08:55 AM
Updated : 28 March 2020, 09:10 AM

বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষকে আক্রান্ত করে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরের তালিকার ওপরের দিকে থাকা ঢাকার অনেক রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিই এখন ঝকঝকে।

দোকানপাট বন্ধ থাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, পলিথিনের ছড়াছড়ি দেখা যায় না। নিজেদের প্রয়োজনেই মানুষও এখন বাড়ি-ঘরের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছে। গাড়িঘোড়া, কলকারখানা, বেশিরভাগ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় দেখা যায় না ধুলার মেঘও।

ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে কাগজে কলমে ‘লকডাউন’ না হলেও নগরবাসী এখন নিজেদের বন্দি করে ফেলেছে চার দেয়ালের মাঝে।

এমন সুনসান পরিস্থিতির মধ্যে নয়া পল্টন, পুরানা পল্টন, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, বেইলি রোড, রাজারবাগ, মমিনবাগ, গুলবাগের অলি-গলি ঘুরে পরিচ্ছন্ন ঢাকার কিছু টুকরো টুকরো চিত্র চোখে পড়ল।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুবিদ আলী রাজারবাগ ও নয়া পল্টন লেন এলাকার গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ করেন।

“সকাল থেকে ময়লা নিতাছি, তবে আগের মতো বেশি ময়লা নাই। গলির রাস্তাটা দেখেন কত পরিষ্কার। ২০ দিন আগেও এই রাস্তার চেহারা এমন ছিল না,” বলেন তিনি।

এর কারণ জানতে চাইলে সুবিদ আলী বলেন, “স্যার ঠ্যালার নাম বাবাজী। বিপদে পড়লে মানুষ সচেতন হয়। এই গলির কথাই বলি। ২০ দিন আগেও এই গলির রাস্তার দুই ধারের বাড়ি-ফ্ল্যাটের উপর তলার স্যাররা টিসু পেপার ফেলতেন, বাচ্চারা চকলেটের খোসা ফেলত। কিন্তু এখন বাসা-বাড়ির স্যাররা সর্তক হইছেন। নিজের ঘর যেমন পরিষ্কার রাখছেন, বাইরের আঙিনাও পরিষ্কার করছেন।”

আবর্জনার দুর্গন্ধ দূর করতে আগে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হলেও এখন আর করতে হচ্ছে না বলে জানান সুবিদ আলী।

শান্তিবাগ গলির মোড়ে ঠেলাগাড়িতে করে তরি-তরকারি বিক্রি করছিলেন আমিন মিয়া। কথা হল তার সঙ্গে।

কয়েকদিন আগেও ওই জায়গার চারপাশে আবর্জনা, তরিতরকারীর খোসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত। এখন এচারপাশ একেবারেই নেই।

আমিন মিয়া বলেন, “এইখানে১৫ বছর যাবত তরিতরকারি বেচি। এই গলিতে আমার বান্ধা (নিয়মিত) কাস্টমার আছে। তিনদিন আগে উনারা বইলা দিছেন, এখানে ব্যবসা করতে হলে চারপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হইব। নইলে এখানে আর বসতে পারমু না।

করোনাভাইরাস নিয়ে ব্র্যাকের সচেতনতামূলক লিফলেট দেখিয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস অপরিষ্কার জায়গায় নাকি বেশি থাকে। সেজন্য বারে বারে সবাইরে হাত ধুইতে কইছে, সবাইরে মাইনা চলতে কইছে।”

বেইলি রোডের অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানালেন, ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে মানুষের মধ্যে মধ্যে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

আকবর সর্দার নামের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, “সাত বছর যাবত বাসা-বাড়ির ময়লা নিই। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সামনে ময়লা পড়ে থাকতেও দেখছি। গত কয়েকদিন যাবত ওইরকম দেখিনা।

“আপনি বেইলি রোডের লম্বা সড়কটা দেখেন। দুই পাশে খাবারের অনেক দোকান-পাট। বড় লোকের ছেলে-মেয়েরা আসে খাবার-দাবার খাইতে । কিন্তু যেইভাবে রাস্তার পাশে কোকের গ্লাস, আইসক্রিমের খোসা ফেলেন- এইটারে আপনি কী কইবেন? এখন এখানকার দোকান-পাট বন্ধ, দেখেন এখন বেইলি রোডের রাস্তা কত পরিষ্কার।”

মমিনবাগের বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রামণে আমাদের মনের ভেতরে যে রকম আতঙ্ক-উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সচেতনতাও বেড়েছে। আগে চেয়ে আমরা নিজের অথবা নিজেদের সম্পর্কে সজাগ হয়েছি, সেলফ কেয়ারনেস বেড়েছে।

“এটাকে আমি মানুষের জীবনের জন্য ইতিবাচক ডেভলপমেন্ট বলতে চাই। বৈশ্বিক এই মহামারী থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতাবোধটাই আমাদের জন্য রক্ষাকবচ হতে পারে। আমি নিজে এখন বাসা ও চারপাশের আঙিনা পরিষ্কার রাখছি। ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের পরিষ্কার থাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।”