৪৯ বছর পর ভিন্ন এক স্বাধীনতা দিবস

পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার ৪৯তম বার্ষিকী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণ ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে বাংলাদেশে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 06:18 PM
Updated : 26 March 2020, 06:31 AM

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আগের বছরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এবার স্বাধীনতা দিবস নতুন আবহ নিয়ে আসায় প্রস্তুতি ছিল অনেক।

কিন্তু মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থগিতের পর কভিড-১৯ রোগের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখার মধ্যেই এবারের স্বাধীনতা দিবস এল।

দিনটির প্রাক্কালে বুধবার জাতীয় উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

“জনসমাগম হয়, এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।”

গত প্রায় অর্ধ শতকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসা বাংলাদেশে এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান এমন কাটছাঁট করতে হল।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হিসাবে বিশ্বের ১৭৩ দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার ছাড়িয়েছে; আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ।

আর বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের পাঁচজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

জনসমাগমে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে বলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এসেছিল আগেই। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকে শুরু হয়েছে দেশের সব অফিস-আদালতে ছুটি। এই ছুটি চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত।

সেই সঙ্গে সড়ক, নৌ ও আকাশপথেও সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর তাতে  করে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মত ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশও কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়েছে।

সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা জানানোর যে কর্মসূচি হয়, সেটা এবার হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শিশু কিশোর সমাবেশ কিংবা প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজও হচ্ছে না। বাতিল করা হয়েছে বঙ্গভবনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও।

২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চলেছিল গণহত্যা।

এই আক্রমণ বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধের পথ তৈরি করে দেয়; পাকিস্তানের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করে দেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীন।

পাকিস্তানিরা বন্দি করলেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তির সংগ্রাম, মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র সেই সংগ্রামে আসে বিজয়।

বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বর্তমান পরিস্থিতিকেও যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব।”

বাণী

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, “স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করাই হোক মুজিববর্ষে সকলের অঙ্গীকার।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “২৬ মার্চ আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন।

“প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি…বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান।