পাপিয়ার ‘কারবারে ওয়েস্টিনকর্মীরাও’, সিআইডির মামলা

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী গুলশানের অভিজাত যে হোটেলে ডেরা বানিয়ে দিনের দিন পর অবৈধ অর্থ আয় করেছেন, সেই ওয়েস্টিনের কর্মীদেরকেও সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2020, 08:53 AM
Updated : 24 March 2020, 08:56 AM

হোটেলটির ২৬টি কক্ষকে অবৈধ কারবারে বিভিন্ন সময় পাপিয়া ও তার স্বামী ব্যবহার করতে বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে। আর এ কাজে তাদেরকে সহায়তা করতেন হোটেলটির বার ম্যানেজার মো. বশির।

শনিবার সিআইডির পক্ষ থেকে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর (মতি সুমন) বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম নতুন একটি মামলায় এসব অভিযোগ করা হয়েছে।

গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামানের দায়ের করা মামলায় পাপিয়া ও সুমন ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আরও চারজনকে।

অন্য আসামিরা হলেন- পাপিয়া-সুমনের সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়্যিবা নূর, তেজগাঁও এফডিসি গেটসংলগ্ন কার একচেঞ্জের অন্যতম মালিক যুবায়ের আলম এবং হোটেল ওয়েস্টিনের বারের ম্যানেজার মো. বশির।

এদের মধ্যে যুবায়ের দেশের বাইরে রয়েছেন আর বশির পলাতক। আর সাব্বির ও তায়্যিবা আগেই পাপিয়া-সুমেনর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গাড়ির দোকান ‘কার এক্সচেঞ্জে’ এ পাপিয়ার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলে আগেই জানিয়েছিল র‌্যাব।

ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া, তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী (মতি সুমন) এবং তাদের দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হন। 

রিমান্ডে পাওয়ার পর সোমবার বিকালে ঢাকা হাকিম আদালত থেকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে যায় পুলিশ।

পরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তারের সময় ওই চারজনের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট,  ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয় র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেছিলেন, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই নারী রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেল ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার উপরে।

“এই নারীর নামে ওই হোটেলের ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ সব সময় বরাদ্দ থাকত। নিজের এবং কাস্টমারদের মদ-বিয়ার পান করানো বাবদ হোটেলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন তিনি। এই হোটেলে নিয়মিত কয়েকজন তরুণী থাকত, যারা তার ‘কাস্টমারদের’ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করত। এজন্য তাদের মাসিক বেতন বরাদ্দ ছিল।”

'কার এক্সচেঞ্জ' ছাড়াও ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশনস' নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে তাদের।

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ওই দম্পতির বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা থাকার তথ্য মেলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে। 

গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে জাল নোটের মামলা হয় বিমানবন্দর থানায় আর অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয় শেরেবাংলা নগর থানায়। আগের তিনটি মামলাই তদন্ত করছে র‌্যাব। 

শনিবার সিআইডির করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিকিউরিটি সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক টোকন মিয়া, তার দুই সহযোগী স্বপন মিয়া এবং আইয়ুব আলীকে নরসিংদীতে আটকে রেখে মেয়েদের সাথে আপত্তিকর ছবি তোলা হয়।

পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে পাপিয়া তার বাবার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন।

এছাড়া একই বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ওয়েস্টিনের ২২০১ কক্ষে মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কাছ থেকে পাঁচ কোটি নয় লাখ ৭৭ হাজার টাকা আদায় করেন পাপিয়ারা।

সেই টাকারই একটি বড় অংশ কার একচেঞ্জ, নরসিংদীতে কেএমসি এন্টারপ্রাইজ এবং কেএমসি কার ওয়াশ অটো সলিউশিনে বিনিয়োগ করেন তারা।

এছাড়া পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ওয়েস্টিনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় হোটেলের ২৬টি কক্ষ অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতেন বলেও মামলায় উল্লেখ করেছেন বাদী।

মামলায় বলা হয়, আসামি সাব্বির ও তায়্যিবা প্রতারণা, হুমকি, ভয়ভীতি দেখানো, ওয়েস্টিনের কর্মকর্তা বার ম্যনেজার বশির হোটেল কক্ষে ব্যবসায়ীদের আপত্তিকর ছবি তুলে তা সংরক্ষণ করে অর্থ আদায়ে পাপিয়া এবং তার স্বামীকে সহায়তা করতেন।

আর পাপিয়ার এসব অর্থ অবৈধভাবে উপার্জিত জেনেও যুবায়ের আলম তার ‘কার একচেঞ্জ’ নামের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে মুদ্রাপাচার আইনে অপরাধ করেছেন।

পাপিয়া এভাবে অবৈধভাবে উপার্জিত আয়ের তিন কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ওয়েস্টিনে বিল এবং ইন্দিরা রোডের বাসা ভাড়া বাবদ ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এছাড়া প্রায় ৬০ লাখ টাকা নিজের কাছে রাখেন, যা ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে বলে মামলায় বলা হয়েছে।