মাস্ক পরে বায়তুল মোকাররমে জুমার জামাতে

বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বহু মুসল্লিকে মুখে মাস্ক পরে জুমার ফরজ নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2020, 06:48 PM
Updated : 20 March 2020, 06:51 PM

এছাড়া করোনাভাইরাস রোধে মসজিদের পেশ ইমাম সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে নামাজ পড়িয়েছেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের ঘণ্টাখানেক আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক ‘জরুরি’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাসায় ওজু করে সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদে গিয়ে শুধু জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানায়।

জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজের আগে ১০ মিনিট খুতবা পড়ানো হয়। নামাজের পর মোনাজাতে করোনাভাইরাসের মতো সব জটিল ও কঠিন রোগ-বালাই থেকে দুনিয়ার সব মুসলমানকে রক্ষার দোয়া করেন পেশ ইমাম।

মুখে মাস্ক পরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ আদায় করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রেদোয়ানুল কারীম।

এই প্রথম মাস্ক পরে কোনো নামাজ আদায় করতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস রোধে সতর্কতা অবলম্বন হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করেছেন তিনি।

“আসলে রোগ-বালাই আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে দিয়ে থাকেন। আবার তিনিই তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেন। তারপরও যতটুকু সম্ভব হয় মানুষকে সতর্ক হয়ে থাকতে বলা হয়েছে বিভিন্ন হাদিস ও কিতাবে। সেই কারণে আমি মাস্ক পরেই নামজ আদায় করেছি।”

আরেক মুসল্লি আল নূর হজ ও ওমরা এজেন্সির স্বত্ত্বাধিকারী মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, “অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজ বাসায় পড়ছি। তবে জুমার নামাজ বলে মসজিদে এসে আদায় করলাম।”

করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এই মসজিদে নামাজ আদায় করে একটি হোটেলের বাবুর্চি মো. ইয়ামিন বলেন, “আল্লাহ যেদিন আমাদের সৃষ্টি করেছেন, একই সাথে মৃত্যুরও দিন ঠিক রেখেছেন। তাই করোনাভাইরাসের কারণে ভয় পেয়ে নামাজ ছেড়ে দিতে পারি না।”

তবে করোনাভাইরাস রোধে কর্মক্ষেত্র ও কোথাও চলাফেরা করার সময় তিনি মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন বলে জানান এই বাবুর্চি।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবার সতর্ক হওয়ার উচিত বলে মন্তব্য করে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় করা আরেকটি মসজিদের ইমাম হেদায়েতুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আজ এই ইমাম সাহেব জুমার নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছেন। এটা ঠিক না। আমি এই বিষয়টি সহজে মানতে পারলাম না।”

হেদায়েতুল বলেন, “হাদিসেই বলা আছে কেউ যদি কোনো জটিল ও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন তাহলে তিনি যেন লোক সমাগমস্থল থেকে দূরে থাবেন। তো কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি যেন মসজিদে না আসেন, সেটাই হওয়া উচিত।”

এদিকে জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটের পাশে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি কামনায়’ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামী সংগঠন খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর কমিটি।

নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে দশ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২০ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের, যিনি বিদেশফেরত পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন।

শুক্রবার জুমার নামাজে বড় জমায়তে হয় বলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে বেশি। এ কারণে বিভিন্ন মুসলিম দেশ ইতোমধ্যে মসজিদে জুমার নামাজ পড়া বন্ধ রাখতে বলেছে। সৌদি আরব মক্কা আর মদীনার প্রধান দুই মসজিদ ছাড়া বাকি সব মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে।