সবাই দেখাচ্ছে আইইডিসিআরকে, সেখানে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে

জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের অনেককে চিকিৎসা না দিয়ে কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরে এখানে এসে বিদেশফেরত ও এ ধরনের কারও সংস্পর্শে না আসায় কোনো ব্যবস্থা ছাড়াই ফিরে যেতে হচ্ছে।

ওবায়দুর মাসুম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2020, 03:41 PM
Updated : 18 March 2020, 03:49 PM

ফেইসবুকে এ ধরনের অভিযোগ ছড়ানোর পর বুধবার আইইডিসিআরে গিয়ে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল থেকে সেখানে পাঠানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

আইইডিসিআরও বলছে, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এ ধরনের রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টি এখন প্রকাশ্য হয়ে গেছে। সমস্যাটি সমাধানে চেষ্টা করছেন তারা।

গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহান শহরে প্রথম দেখা দেওয়া নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা বাংলাদেশে শুধু আইইডিসিআর-এ হয়ে থাকে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো স্বজন সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন বা রোগী যদি গত এক মাসের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে এমন দেশ ভ্রমণ করেন তাহলে তারই পরীক্ষা করবেন তারা।

দুপুরে মোহাম্মদপুর থেকে আইইডিসিআরে আসা সাহানি খাতুন জানান, মঙ্গলবার ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যেতে বলেন। তবে রাত বেশি হওয়ায় কাল আসতে পারেননি।

তিনি বলেন, বুধবার আইইডিসিআরে আসার আগে আবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তখনও তারা একই পরামর্শ দেন।

“জ্বর, মাথা ব্যথা, দাঁত ব্যথা, মাথা ঘুরায়। আইজ সকালে আবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গেছি। সেখান থেইকা অষুধ লেইখা দিয়া আবার বলছে এইখানে আসতে। আমি বলছি, এইখানে লিখ্যা দেন, তারা বলছে লেখা লাগবে না, আসলেই পরীক্ষা করে দেবে। এইখানে আসছি, এইখানে নাকি পরীক্ষা করে না।”

বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী উবায়দুলও আইইডিসিআরে এসেছেন নভেল করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য। তিনি জানান, সর্দি-জ্বর থাকায় মঙ্গলবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানকার চিকিৎসক তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলেন।

“কুর্মিটোলা গেলে সেখান থেকে আমাকে এইখানে পাঠিয়েছে। আমার শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশি আছে। এজন্য ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে বলেছে। তবে আইইডিসিআর বলছে, তারা বিদেশফেরত ছাড়া পরীক্ষা করবে না।”

সানজিদা চৈতি নামে একজন এক ফেইসবুক পোস্টে দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, গত শনিবার রাতে তার মায়ের পিঠ ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড কাশি ও জ্বর আসে। দুদিন বাসায় রেখে সোমবার রাতে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখান থেকে তার মায়ের নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষা  করতে বলা হয়।

“হিস্ট্রি শুনে বলল, করোনাভাইরাসের জন্য সরকার নির্ধারিত চারটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে একেবারে সব ইনভেস্টিগেশন করতে। আর তা না হলে উনারা কিছু ব্লাড টেস্ট আর চেস্ট এক্সরে করে দেখেবে তারপর রিপোর্ট নিয়ে বাসায় চলে যেতে হবে।”

পরীক্ষাগুলো করার পর স্কয়ারের চিকিৎসক জানান, তার মায়ের নিউমোনিয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

“তারা বলেন, আম্মুকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। আমরা আম্মুকে মেডিসিন দেওয়ার কথা বললাম, কিন্তু ডক্টর বলল যা করার কুর্মিটোলাতে করবে। আগে রোগীর কভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হবে।”

এরপরে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করলে তারা নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষা কোনোটই করেননি বলে জানান সানজিদা চৈতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিসিন) ডা. মির্জা নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ ধরনের একজন রোগী এসেছিলেন। তবে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে আইইডিসিআরে পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে আসা সব রোগীকেই তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, “সরকার থেকে বলা হয়েছে এ ধরনের লক্ষণ থাকলে জানানোর জন্য। সে কারণে আমরা তাকে পাঠিয়েছি। অন্য রোগীদের আমরা চিকিৎসা দিই। নইলে হাসপাতাল তো খালি হয়ে যাবে।”

শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার তথ্য আইইডিসিআরও পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, “এ ঘটনা অনেক দিন ধরেই হচ্ছিল। চিকিৎসকরা কেন যান না, হয়ত তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি থাকতে পারে যে, আমরা যেহেতু রোগীর সংস্পর্শে যাব তখন কী হবে?

“সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের উৎসাহিত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। আমাদের পরিচালক (হাসপাতাল) এ বিষয়টি বিশেষভাবে দেখছেন। প্রত্যেকটি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায় সে চেষ্টাটি আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মভাবে করছি। সেটা এখনও ফাইনাল হয়নি, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না।”