‘আমরা জেগে তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তার আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2020, 02:31 PM
Updated : 16 Dec 2021, 07:04 PM

তিনি বলেছেন, “আমরা জেগে রইব তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এদেশের মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।”

জাতির পিতার জন্মশতর্বার্ষিকী-মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনের প্রস্তুতি থাকলেও নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ায় আয়োজনের পরিসর সীমিত করে আনা হয়।

টেলিভিশনে ভাষণ ও অনুষ্ঠানমালায় মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় মুজিববর্ষের বছরব্যাপী আয়োজনের।

নিজের এবং বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে সবাইকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনার শুরু করা এই ভাষণে জাতির পিতার শৈশব এবং সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন,“দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন।

“মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন-তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।”

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হলেও ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি।

“ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি।

“ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি, তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশ। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে।”

বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।”

আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশের এখন বিশ্বে মর্যাদার আসনে উঠে আসার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তার ত্যাগ বৃথা যায়নি।

“আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

“তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।”

তরুণদের জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

“ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।”

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন সীমিত করার কথাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যেসব দেশের সরকার প্রধান ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন ও যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে, তাদের ধন্যবাদও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নয়,বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম দেশ, ইউনেসকো, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।”

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরপর তিন বার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দেওয়ায় দেশবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।