সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঠেকাব মহামারী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় পর্যায় থেকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক.বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2020, 10:51 AM
Updated : 17 March 2020, 11:50 AM

মঙ্গলবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিক সেবা কর্নার উদ্বোধনের পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন।

কেউ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে ফেলার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।  বিদেশ থেকে কেউ এলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক বলেও আবার জানান তিনি।

আড়াই মাস আগে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীতেহ রূপ নিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ১০ জন কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়েছেন, যাদের অধিকাংশের ভাইরাস সং ক্রমণ ঘটেছে বিদেশে; তাদের মাধ্যমে স্বজনরাও আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “অন্যান্য দেশে যেহেতু (আক্রান্তের সংখ্যা) ১০ হাজার-২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, সেখানে ১০ জন খুবই সীমিত।”

কেউ আক্রান্ত হলে তার নিজেকে ঘরে আবদ্ধ করে ফেলার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বড় কাজটি হল আমাদেরকে নিজেদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে ফেলতে হবে। আমাদেরকে সমাবেশ সীমিত করতে হবে এবং যে কোনো ধরনের সমাবেশে না গেলেই ভালো।

“কারণ জনসমাবেশে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যায়। যেমন ছড়িয়েছে ইরান ও কোরিয়ায়। সে জন্যই আমরা গত দুই মাস যাবত দেশের মানুষকে সতর্ক করে আসছি।”

বিদেশ থেকে কেউ এলে তার ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করার কথা জানিয়ে বিদেশ ফেরতদের দেশের স্বার্থে তা মেনে চলার আহ্বান জানান জাহিদ মালেক।

কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে শাস্তি হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত গঠিত কমিটিগুলোর মাধ্যমে নির্দেশনা অমান্যকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা এটা (করোনাভাইরাস) মোকাবেলার জন্য জাতীয়, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও কমিটি গঠন করেছি।”

“এই কমিটিকে আমরা প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে থাকি, যাতে বিদেশ থেকে যারাই আসুক না কেন, ওই এলাকা ওই গ্রামে ওই ওয়ার্ডে তারা যেন নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকে।

“অনেকে হয়ত মানতে চায় না। সে দিকে চিন্তা করে আমাদের কমিটিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ২৪ ঘণ্টা তারা মনিটরিংয়ে থাকবে।”

নির্দেশনা অমান্যকারীদের ‘জেল দিতেও কুণ্ঠাবোধ করব না’ হুঁশিয়ারি দিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, “কারণ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে আমরা পিছপা হব না। আমরা কাউকে ছাড় দেব না।”

তিনি জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জাতীয় কমিটিতে মধ্যে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রয়েছে।

“শুধু তারাই নয়, আমাদেরকে পুলিশ, ডিসি, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ এমনকি স্থানীয় চৌকিদার থেকে শুরু করে সবাইকে সহযোগিতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবং সকলেই সহযোগিতা করছে। সকলের সহায়তায় এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে আশা করি।”

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষার কিট যথেষ্ট রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আরও আমদানিও হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালে শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিক সেবা কর্নার উদ্বোধনের পর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিশু হাসপাতালের কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিনামুল্যে শিশু ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা শিশু হাসপাতাল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশে ১৮ হাজার শিশু আছে, যাদের ইনসুলিন দিতে হয়। বারডেম থেকে মাত্র ৬ হাজার শিশুকে ইনসুলিন নিতে পারে।

“আজথেকে আমরা দেশের আটটি জায়গায় শিশুদের বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেব। যারা টাইপ ওয়ান ডাইবেটিসে ভোগে, তারা যদি নিয়মিত ইনসুলিন পায়, তারা সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।”