শেখ হাসিনা পড়বেন কবিতা, শেখ রেহানা কণ্ঠ দেবেন গানে

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম না ঘটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2020, 03:23 PM
Updated : 17 March 2020, 03:50 AM

মঙ্গলবার সীমিত আয়োজনের এই অনুষ্ঠানে বাবাকে নিয়ে শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করবেন বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; শেখ রেহানা কণ্ঠ দেবেন মুজিববর্ষের ‘থিম সং’ এ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবর্তিত কর্মসূচি তুলে ধরেন।

১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার সেই আয়োজনেও কাটছাঁট করা হয়েছে।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল; মুজিববর্ষ ঘোষণা করে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত নানা আয়োজনের সূচিও ঠিক হয়েছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়ায় জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আয়োজন সীমিত করার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

এখন আতশবাজি, আলোকসজ্জা আর আলোচনার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের উদ্বোধন হবে, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শিশু দিবসে স্কুল-কলেজে শিশুদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও তা এবার আর হচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশপ্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাবাকে নিয়ে শিশুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার লেখা একটি চিঠি কোটি শিক্ষার্থীর একসঙ্গে পাঠ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। তবে চিঠিটি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থল ও সমাধিস্থলকে ঘিরে শিশু সমাবেশের যে আয়োজন ছিল, তাও হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কামাল নাসের চৌধুরী।

তিনি বলেন, জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে মুবিজবর্ষের মূল আয়োজন বাতিল হওয়ার পর মঙ্গলবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে কোনো ধরনের জনসমাগমের ব্যবস্থা না রেখে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণের সঙ্গে মিল রেখে রাত ৮টায় এ অনুষ্ঠানের শুরু হবে। সেই অনুষ্ঠান দেখা যাবে টেলিভিশনে।

কামাল নাসের বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে।

এরপর রেকর্ড করা সব অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে টেলিভিশনে।

 

দুই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পর রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন। এরপর থাকবে শত শিশুর কণ্ঠে গান। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন জাতির উদ্দেশে।

কামাল নাসের বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ব্যক্ত করবেন তার অনুভূতি। শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করবেন শেখ হাসিনা, তাতে থাকবে বাবাহারা কন্যার আকুতি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে ‘থিম সং’ করা হয়েছে, সেটি গেয়ে শোনাবেন শিল্পীরা। শেখ রেহানাও সেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন বলে জানান কামাল নাসের।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের রেকর্ড করা ভাষণ এদিন সম্প্রচার করা হবে। জাতিসংঘ ও ওআইসি মহাসচিবের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থাকবে সেখানে।

এছাড়া জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হবে পিক্সেল ম্যাপিং, সেখানে থাকবে লেজার শো। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দুই সিটি করপোরেশন আতশবাজির প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।

এর আগে বিকাল ৫টায় গণভবনে বসে মুজিববর্ষের স্মারক ডাকটিকিট ও স্যুভেনির উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি যাবেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়।

সংবাদ সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

অন্যান্য কর্মসূচি

সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সব আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সবাইকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল করা হবে।

এছাড়া দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে অসহায় দুঃস্থদের মাঝে খাবার, বস্ত্র ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সামগ্রী বিতরণ করবে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ কমিটি।

দুপুর ১টায় বনানীর কড়াইল বস্তিতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এতিম ও দুস্থদের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ করবে।

রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে সারাদেশে একযোগে আতশবাজি ও ফানুস ওড়াবে আওয়ামী লীগ।

ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি হবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বড় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শুরু হয় ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ক্ষণগণনা (ফাইল ছবি)

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর হাতিরঝিলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানে আতশবাজির প্রদর্শনের পাশাপাশি ওড়ানো হবে ফানুস।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাত ৮টায় নগরভবনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেখানে আতশবাজির পাশাপাশি থাকছে আলোচনা সভা।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আয়োজন করেছে আলোচনা সভার।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজন করেছে বিশেষ প্রার্থনা সভার। এই প্রার্থনা সভায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও পূজা কমিটির নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে আয়োজন করা হবে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবার। ফ্রি সার্জারি সেবার উদ্বোধনও হবে এদিন। রক্তদান কর্মসূচির পাশাপাশি শিশু রোগীদের ফলোআপ চিকিৎসার আয়োজনও করেছে বিএসএমএমইউ।

ক্যালেন্ডার ‘মুজিববর্ষ-১০০’

ঘটনার ক্রমানুসারে ১২ মাসের নাম দিয়ে ‘মুজিববর্ষ-১০০’ নামে নতুন ক্যালেন্ডারের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

সোমবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নতুন এই ক্যালেন্ডারের মোড়ক উন্মোচন করেন।

নতুন এই ক্যালেন্ডারে ১২ মাসের নাম দেয়া হয়েছে স্বাধীনতা, শপথ, বেতারযুদ্ধ, যুদ্ধ, শোক, কৌশলযুদ্ধ, আকাশযুদ্ধ, জেলহত্যা, বিজয়, ফিরে আসা, নবযাত্রা ও ভাষা।

অনুষ্ঠানে শ্রম সচিব বলেন, “এ ক্যালেন্ডার উদ্বোধন বাঙালি জাতির জন্য মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের ধ্রুব তারার মতো। তাকে স্মরণ করেই জাতি এ দেশকে এগিয়ে নেবে। ”

নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে কোনো কল-কারখানা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।