করোনাভাইরাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল খোলা থাকবে

নভেল করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবে আতঙ্কের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2020, 06:44 AM
Updated : 16 March 2020, 02:32 PM

তবে এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম চলবে এবং আবাসিক হলগুলোও  খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সকল বিভাগের চেয়ারপারসন, হল প্রভোস্ট ও ইনস্টিটিউশনগুলোর পরিচালকদের নিয়ে এক জরুরি সভার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান উপাচার্য।

তিনি বলেন, “শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের দাবি ও পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা হচ্ছে ১৮-২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। তবে এ সময়টা সামনের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে পুষিয়ে নেওয়া হবে, যাতে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মধ্যে না পড়ে।”

গত ডিসেম্বরের শেষে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করা নভেল করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ দেশে পৌঁছে গেছে। বিশ্বজুড়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজারের বেশি মানুষের।

এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে চলাফেরায় বিধিনিষেধ, ভ্রমণ সতর্কতা, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মত করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে শুরু করে। তবে সরকারের তরফ থেকে এতদিন বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশে এখনও সেই পরিস্থিতি হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে রোববার উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও ক্যাম্পাস বন্ধের আহ্বান জানায়।

একই দাবিতে শনিবার রাতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। পরে রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী ও ডাকসু নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তারা অনশন ভাঙেন।

তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই নিজরা উদ্যোগ নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৬৫টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “এই সুরক্ষা দেওয়াটাও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালেন্ডার পুনর্বিন্যাস করা হবে। এই সময়ে যেসকল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেই তারিখগুলো পুনর্বিন্যাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অনুরোধ জানাব। একইসঙ্গে পরীক্ষার নতুন তারিখ যেন শিক্ষার্থীরা দ্রুত জানতে পারে সেই আহ্বানও জানাব।

ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজ চালু থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মহামারী মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘সামাজিক দূরত্ব’ মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি ও আতঙ্ক কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজ চলমান থাকবে।”