করোনাভাইরাসে নতুন মৃত্যু চীনে ১৩, ইতালিতে ২৫০

উৎসস্থল চীন নভেল করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনলেও এখন বিপর্যয়ের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে ইউরোপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2020, 12:38 PM
Updated : 14 March 2020, 12:50 PM

গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ রোগে চীনে যেখানে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ১৩, সেখানে ইউরোপের দেশ ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৫০ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের এখন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার নাগাদ বিশ্বের ১২৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে নভেল করোনাভাইরাস।

গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮৮। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৩২০ জনে।

চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১১ জন; আর যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তারা সবাই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন।

আড়াই মাস আগে এই হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ঘটে। পরে এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় নভেল করোনাভাইরাস, রোগের নাম হয় কভিড-১৯।

উহান থেকে দ্রুতই চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস; লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।

কিন্তু এরপর চীনের নানা পদক্ষেপে সংক্রমণের গতি কমে আসে। চীনে নতুন ১১ জনকে নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২১ জন। নতুন ১৩টি নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৮৯।

চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর প্রবণতা দেখা গেলেও তা তারা মোটামুটি সামাল দিতে পারলেও হিমশিম খাচ্ছে ইতালি ও ইরান।

ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৬৫ জন বেড়ে সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে; মৃতের সংখ্যা ৯৭ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১১ জন।

করোনাভাইরাসের প্রভাব ফ্রান্সেও। ছবি: রয়টার্স

ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় আড়াইশ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ, যা একদিনে দেশটিতে কভিড-১৯ রোগে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।

ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৬৬০ জন।

আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ইতালি ও ইরানের পর দক্ষিণ কোরিয়া (৮ হাজার ৮৬) থাকলেও তার পরের তিনটি স্থানে রয়েছে ইউরোপের তিন দেশ স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানি।

স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৩১, ফ্রান্সে ৩ হাজার ৬৪০ এবং জার্মানিতে ৩ হাজার ৬২ জন। সুইজারল্যান্ডেও আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২৫ জন।

ওয়েলসে ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৬০। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রিয়েসাস বলেন, “চীন বাদে অন্য সব দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও ইউরোপে তা বেশি, যা ইউরোপকে এখন এ রোগের কেন্দ্র করে তুলেছে।”  

ইউরোপের এই অবস্থা দেখে করোনাভাইরাস ঠেকাতে সরকারগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রিয়েসাস।

“এভাবে জ্বলতে আমরা দিতে পারি না,” বলেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা দেশ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আক্রান্ত দেশ থেকে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ; সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে, বন্ধ রাখা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।

ভারতে দ্বিতীয় কভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে।

জনসমাগমের মতো সব কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায় সব দেশে; তিউনিশিয়া ও কুয়েতে মসজিদে নামাজ পড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।

রোববার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে সৌদি আরব।

ফ্রান্সের লুভর জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে কানাডার পার্লামেন্ট।

নিউ জিল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে দেশেই যেই ঢুকুক, তাকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তাইওয়ানও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপ থেকে আসা ব্যক্তিদের জন্য।

তবে রদ্রিদো দুতার্তের দেশ ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় রাতে জনসমাগম বন্ধে জারি করা হয়েছে ‘কারফিউ’; দোকান-পাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এক মাসের জন্য।