পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো গড়ার আত্মবিশ্বাস: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরে যাওয়ার পর পদ্মার মতো খরস্রোতা নদীতে সেতু নির্মাণের এতবড় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের টাকায় বড় অবকাঠামো গড়ার আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2020, 08:14 AM
Updated : 12 March 2020, 08:14 AM

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। 

প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েটি দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু সড়কপথ না, নৌপথ, রেল এবং সেইসাথে আকাশপথ সব দিকেই আমাদের লক্ষ্য আছে। আমরা সমস্ত বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করে দিচ্ছি, যা মানুষকে আরও উন্নয়নের সুযোগ দেবে; জীবনমান উন্নত করবার সুযোগ পাবে। 

তিনি বলেন, যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা। যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি ভালো হয় একটা দেশের বা অঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হয়ে যায়।

ভিডিও কনফারেন্সে ৩য় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতু অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতুরও উদ্বোধন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি এতে আমাদের এই সমস্ত অঞ্চলগুলোতে যে যোগাযোগটা তৈরি হবে তার ফলে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীতা তা অর্জন করতে পারবে, অর্থনৈতিক উন্নতি হবে এবং আমাদের দেশের মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হবে।”

নদী, খাল, বিল দিয়ে ঘেরা নদীমাতৃক বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন করা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মার মত খরস্রোতা নদীতে সেতু নির্মাণ করা বিরাট ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল।

“কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করছি। আমরা যে নিজস্ব অর্থায়নে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারি এই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের আছে। এটা ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় একটা আত্মসম্মানের ব্যাপার।”

পদ্মা সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নিতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতে না হতেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের ওপর দোষারোপ করেছিল দুর্নীতির। আমি সেখানে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, এখানে দুর্নীতি হয়নি।

“আমাদের অনেকেই এখানে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে, এখানে দুর্নীতি হয়েছে- এটা নিয়ে মামলাও হয়। কানাডার কোর্টে যে মামলা হয়.. সেখানে প্রমাণিত হয় এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমস্ত অভিযোগ ছিল বানোয়াট। কিন্তু এটা আমাদের জন্য একটা সম্মানের ব্যাপার ছিল।”

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, “আমি, আমার ছোট বোন, আমাদের পরিবার। আমরা তো সব হারিয়েছি। বাবা-মা ভাই সব হারিয়ে আমরা দুজন নিঃস্ব, রিক্ত। আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, উন্নত করা, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা-এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। 

“কিন্তু এই ধরনের একটা অভিযোগ যখন নিয়ে আসে, এটা আমাদেরকে চরমভাবে অসম্মান করা হয়েছিল। তাই এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি এবং আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে, তখন তারা সকলে আমাদেরকে সমর্থন দিয়েছে।”

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব  মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে তথ্য চিত্র তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদও বক্তব্য দেন।