স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিনে ছুটি না কাটার অনুরোধ

করোনাভাইরাস ধরা না পড়লেও যাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে, তাদের ছুটি না কেটে সম্ভব হলে বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দিতে সব অফিস-দপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে আইইডিসিআর। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2020, 12:44 PM
Updated : 11 March 2020, 12:45 PM

বুধবার মহাখালীতে আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রতিটি দপ্তরের কর্মীদের পাশাপাশি সবার স্বার্থেই এটা করা প্রয়োজন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এমন দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন, তাদের সবাইকে ১৪ দিন স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে আইইডিসিআর।

আর বিদেশ থেকে না এলেও কারও মধ্যে যদি করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়, তাদেরও বাড়িতে অবস্থান করে ওই ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তার মধ্যে ভাইরাস থেকে থাকলে তা অন্য কারও মধ্যে ছড়াতে না পারে।  

অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, রোগ ধরা না পড়লেও ১৪ দিন বাড়িতে থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ সেটা দীর্ঘ ছুটির পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে।

এ কারণে সব অফিস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “আপনারা তাদেরকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করুন, যাতে তারা বাড়িতে থাকতে পারেন। যেক্ষেত্রে বাড়িতে থেকেই কাজ করা সম্ভব, তাদের বাড়ি থেকেই কাজ করার ব্যবস্থা যেন করা হয়।

“এর বাইরে যদি তাদের কোনো কাজের প্রয়োজন থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের ছুটির হিসাব থেকে না কেটে… কারণ ১৪ দিন ছুটি অনেক লম্বা ছুটি। এটাকে তাদের কর্মসময় ধরে নিয়ে তাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া, সে বিষয়ে বিভিন্ন অফিস এবং যেসব প্রকল্প রয়েছে, তার ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”

আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যে যে দেশ থেকেই আসুক না কেন, কারও মধ্যে লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

“উপসর্গ থাকলে আমরা মূলত সবাইকে পরামর্শ দিই, ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকুন এবং বিশেষ করে যে দেশগুলোতে সংক্রমণ বেশি, বড় মাত্রায় উদ্বেগ দেখতে পাচ্ছি, সেসব দেশগুলো থেকে এলে আমরা কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলছি।”

পাশাপাশি বিদেশ থেকে আগতদের কিছু বিষয় মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে আইইডিসিআর।

>> প্রয়োজনের বাইরে কোনো জায়গায় না যাওয়া

>> যে কাজের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন, সে কাজে সীমাবদ্ধ থাকা

>> বাকি সময় ঘরে বা হোটেলে থাকা

>> অন্যদের সংস্পর্শ থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্বে থাকা

>> মাস্ক ব্যবহার করা

>> কোনো বৈঠকে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রোটেকশন নেওয়া

১৪ দিন নিজেদের ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টিনে থাকার এই ব্যবস্থাকে ‘হোম কোয়ারেন্টিন’ বলায় ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, “বাড়িতে থাকাকে আমরা হোম কোয়ারেন্টিন বলে থাকি, সেটাকে আমরা সংশোধন করে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন বা সেইফ কোয়ারেন্টিন বলতে চাই।”

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “অনেকে মনে করছেন, আমি তো দুই দিনের জন্য এসেছি, আমার তো বাড়ি নেই, আমারটা তাহলে কীভাবে কোয়ারেন্টিন হবে? সেটাকে আমরা স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিন বলছি।”

কভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকতে সুস্থদেরও মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন আছে কিনা- এই প্রশ্নে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “সুস্থ ব্যক্তিদের মাস্ক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই, কেবলমাত্র অসুস্থ যারা, তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন, আর যারা সেবা প্রদান করছে, তারা।”

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে কিছু স্বাস্থ্যবিধি  মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে আইইডিসিআর।

>> নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ধোয়া

>> অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ না করা

>> আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংক্রমণ এড়িয়ে চলা

>> কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা

>> কারও সঙ্গে হাত মেলানো, কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকা

>> জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ না করা

>> অত্যাবশ্যকীয় হলে ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বন করা

>> অত্যাবশ্যকীয় নয়- এমন সভা, সমাবেশ, সেমিনার আয়োজন না করা

>> জনসমাগমের জায়গা এড়িয়ে চলা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের ক্ষেত্রে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান ডা. ফ্লোরা।