নিহত ইলমার ফুপাত ভাই মাসুম মিয়াকে গত ৭ মার্চ গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তিতে এই হত্যাকাণ্ডে ইলমার বাবা আব্দুল মোতালেবের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ।
এরপর রোববার ইলমার বাবা মোতালেব, মা মঙ্গলী বেগম এবং ওই এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়া ও মো. বাতেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি বলছে, এলাকার প্রভাবশালী শাহজাহান তার প্রতিপক্ষ বাচ্চু মেম্বারের সহযোগীদের ফাঁসাতে মোতালেবকে অর্থ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
২০১৫ সালের ২৮ মার্চ নরসিংদী থানার বাহেরচর গ্রামের একটি ধানক্ষেতে ১১ বছরের ইলমার লাশ পাওয়া যায়। শিশুটি বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
তখন ইলমার বাবা মোতালেব বাদী হয়ে বাচ্চুর পক্ষের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করেও কোনো কূল কিনারা করতে না পারার পর কয়েকমাস আগে সিআইডির কাছে আসে তদন্তের ভার।
ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করা হলেও পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হলে মূল রহস্য উদঘাটিত হয়। হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাসুম রোববার আদালতে জবানবন্দি দেয়।”
তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে শাহজাহানকে সহযোগিতা করতে নিজ মেয়েকে হত্যার জন্য ৩০ লাখ টাকার ‘চুক্তি করেন’ মোতালেব।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বাহের চর এলাকার আধিপত্য নিয়ে শাহজাহান ও বাচ্চু মেম্বারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর মধ্যেই শাহজাহান গ্রুপের মাসুমের সঙ্গে বাচ্চু গ্রুপের তোফাজ্জলের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তোফাজ্জলের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে এক স্বজনের বাড়িতে উঠেন মাসুম। কিন্তু বাচ্চু গ্রুপের সহায়তায় তোফাজ্জল তার মেয়েকে সেই বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন এবং মাসুমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।
তিনি বলেন, “মাসুমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বৈঠকে মোতালেবকে ৩০ লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করে বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য বলা হয়। মোতালেব এতে রাজি হয়ে যায়।”
মোতালেব গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩০ লাখ টাকার মেয়েকে হত্যার সায় দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান ইমতিয়াজ। তবে পুরো টাকা না পাওয়ার কথাও বলেন মোতালেব।
মাসুমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই বছরের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় পাশের দোকানে কিছু কিনে আনতে টাকা দিয়ে বাইরে পাঠানো হয় ইলমাকে। দোকান থেকে ফেরার পথে তার বড় বোনের স্বামী বাবুল এবং ফুফাত ভাই মাসুমসহ কয়েকজন ইলমাকে তুলে নিয়ে পাশের ধান ক্ষেতে নিয়ে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করে।
তখন ইলমার বাবা মোতালেবও ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ।
তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের আগে পুরো ৩০ লাখ টাকা না পেয়ে ফোনে শাহজাহানের সাথে কথা বলার সময় মোতালেব বলেছিল- ‘আগে টাকা দাও পরে কাম সারো’।”
গ্রেপ্তার পাঁচজন ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে আর যারা জড়িত ছিল, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিআইজি ইমতিয়াজ।