করোনাভাইরাস: প্রস্তুতিতে ‘মারাত্মক ঘাটতি’ দেখছে হাই কোর্ট

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রস্তুতিতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2020, 09:57 AM
Updated : 9 March 2020, 05:15 PM

তবে নতুন এই ভাইরাস ঠেকাতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ প্রসংশনীয় বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।

একই সঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে মাস্ক, সেনিটাইজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট, কালোবাজারি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলেছে উচ্চ আদালত।  

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দেওয়া প্রতিবেদন সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদনটি দেখে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কেম এম কামরুল কাদের বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের খবরে দেখলাম মাস্কের জন্য মানুষ দোকানে দোকানে লাইন দিচ্ছেন। একটা মাস্ক কিনতে যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগে সেটা দুঃখজনক।”

চীনের সাথে তুলনা করে এ বিচারক বলেন, “সরকারের উদ্যোগ প্রসংশনীয় কিন্তু যথেষ্ট নয়। সরকার যেসব প্রিপারেশন নিয়েছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে প্যানিকের কিছু নাই। প্রিপারেশনে সিরিয়াস ঘাটতি আছে। আরও ব্যাপক আকার ধারণ করার আগেই প্রিভেন্টিভ মেজারগুলো নিতে হবে। এ নিয়ে অবহেলা, ঘাটতি থাকার কোনো সুযোগ নাই।

“এক-দেড়মাস হয়ে গেছে এখনও স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়ায় আছেন। কেনার জন্য বাজারে মাস্ক, সেনিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে। যদি ছড়িয়ে পরে তাহলে মোকাবেলার প্রস্তুতি তো থাকতে হবে। কারণ হল এর কোনো প্রতিষেধক নাই। আমরা গরিব দেশ। কিন্তু আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাটাই জরুরি। কিন্তু হোপ দেখছি না।”

এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহাসান বলেন, “মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে এটা নিয়ে বাজারে কোনো ধরনের ব্যবসা হয় কিনা পেঁয়াজের মতো, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

“প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট দিয়ে তদারকি করতে হবে। কেউ যাতে বেশি দাম না নিতে পারে, মজুদ না করতে পারে। ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়ালে আমরা কেউ নিরাপদ না। যে ব্যবসায়ী মাস্কের ব্যবসা করছে সে ব্যবসায়ীও নিরাপদ না।”

এসময় আদালতে থাকা আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার রিয়ালাইজ করতে পেরেছে আশা করি। কিন্তু ১০টাকার মাস্ক ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছে করলে সরকার সারা দেশে মাস্ক ফ্রি দিতে পারে।

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “যারা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন তাদের দেওয়া যেতে পারে। ১০-১৫ কোটি দেওয়া সম্ভব না।”

এসময় মওদুদ চিকিৎসক, নার্সদের রোগপ্রতিরোধী বিশেষ পোশাকের মজুদ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।

বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহাসান বলেন, “যদি না থাকে আমরা দেখব।”

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে এ বিচারক বলেন, “আইইডিসিআর-এর একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রেস ব্রিফিং করেন। উনার বক্তব্য আরও পজিটিভ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটা যেন কোনোভাবে মানুষর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে।

“উনারা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, সরকার কি পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো জানানো দরকার। মানুষ কিভাবে সচেতন হবে এবং কি করা দরকার সে বিষয়গুলো মানুষকে জানানো দরকার।”

এরপর নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টর এক আইনজীবী।

তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা চাইলে আদালত আদেশ না দিয়ে আগামী ৫ এপ্রিল শুনানির জন্য রাখে।

গত ৫ মার্চ নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছিল।

সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তিনটি বিষয় জানতে চেয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল।

নির্দেশনা তিনটি ছিল- স্থল বন্দর, নৌ বন্দর, বিমান বন্দর, বিশেষ করে বিমান বন্দর দিয়ে যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে ঢুকছেন, তখন তাদে কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কিনা এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা। 

দ্বিতীয়ত, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা।

তৃতীয় নির্দেশনাটি ছিল, করোনাভাইরাস পরীক্ষা বা শনাক্তের কিট, সরঞ্জাম দেশে পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা, যদি না থাকে তাহলে জরুরিভিত্তিতে আমদানি করার কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সোমবার সেই প্রতিবেদনই উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

চীন থেকে ছড়ানো নভেল করোনাভাইরাস এ পর্যন্ত একশটির বেশি দেশে বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই রোগে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ আট হাজারের বেশি, আর মৃতের সংখ্যা ৩৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশেও তিনজনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।