বুধবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা-২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এসএমই খাতে উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশ্বমানের। এগুলোর সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জড়িত।
এ সময় তিনি এসএমই খাতের উন্নয়নে করনীয় পাঁচটি নির্দেশনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদা নির্ভর শতভাগ রপ্তানিমুখি পণ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে হবে; দেশজ কাঁচামাল ব্যবহার করে ভারি শিল্পের পরিপূরক পণ্য এসএমই শিল্পের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে।
“এই তিন ধারার সমন্বয় ও সংমিশ্রণ দেশের মাটিতে করতে পারলেই আমরা আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব,” বলেন সরকার প্রধান।
এসএমই পণ্যের (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) প্রচার এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ বছর ৮ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
সমস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা যেন গ্রাম পর্যায়ে থেকে গ্রহণ করা হয় সেদিকেও সরকার গুরুত্ব দেয় বলে জানান তিনি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ, রেলওয়ে এবং বিমান সবদিক থেকেই আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি যাতে আমাদের যোগাযোগটা খুব দ্রুত হয়। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হলে পণ্য পরিবহন বা পণ্য বাজারজাতকরণ সুবিধা হয় না।”
কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি চাষ উপযোগী জমি বাঁচাতেও উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
“সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা একশটা বিশেষ শিল্প অঞ্চল গড়ে তুলছি। সেটা সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী। এই একশটা শিল্পাঞ্চলে ইতিমধ্যে আমার নির্দেশ রয়েছে সেখানে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা যেন বিশেষ সুবিধা পায়। কারণ আমি মনে করি নারী-পুরুষ সমানভাবে এগিয়ে আসুক। আরও বেশি করে আমাদের নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিতে চাই। আমি আশা করবো আমাদের বোনেরা আরেকটু আগ্রহী হবেন।”
কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যদি আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারি তাহলে আমরা বিদেশে রপ্তানিও করতে পারব।
“যেহেতু মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমি সবসময় মনে করি শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী হব না। আমার নিজের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। নিজের দেশের ভেতরেও আমার বাজার সৃষ্টি করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি।”
তরুণ সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র ডিগ্রি নিয়ে চললে হবে না। কারিগরি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তাছাড়া আমরা প্রত্যেক উপজেলা পর্যন্ত কারিগরি স্কুল নির্মাণ করে দিচ্ছি। দেশে বা বিদেশে যেখানেই কাজের খোঁজে যাক না কেন সব জায়গায় কিন্তু আসলে এখন সবাই দক্ষ জনশক্তি চায়। সেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
“শুধু একটা পাস করে চাকরির পেছনে ছুটে না বেড়িয়ে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারেন।”
পণ্য বাজারজাতকরণে যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশের অভ্যন্তরে যেমন করেছি, আঞ্চলিকভাবে বা উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও আমরা কিন্তু নিয়েছি।”
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু বক্তব্য দেন।