ভোটার দিবসের আলোচনায়ও ভোটারখরার প্রসঙ্গ

সাম্প্রতিক কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের অনাগ্রহের বিষয়টি ফুটে ওঠার প্রসঙ্গটি এল জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনায়ও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2020, 01:12 PM
Updated : 2 March 2020, 03:07 PM

‘ভোটার হয়ে ভোট দেব, দেশ গড়ায় অংশ নেব’- এ স্লোগানে সোমবার পালিত হয় জাতীয় ভোটার দিবস। গত বছর ১ মার্চ দিবসটি পালন হলেও এবছর থেকে ২ মার্চ থেকে থেকে তা পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে সকালে ঢাকায় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। বিকালে আলোচনা অনুষ্ঠান হয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের আলোচনায় আসে ভোটকেন্দ্রে ভোটারখরার বিষয়টি।

অনেকটা আত্মপক্ষ সমর্থনে তারা নিজেদের দায় অস্বীকারের পাশাপাশি ভোটারদের আগামীতে ভোটকেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালান।

সিইসি বলেন, “ইসির প্রতি ভোটারদের আস্থা আছে বা নেই- এটা নির্ধারিত করে বলার সুযোগ নেই।

“ভোটার ভোট দিতে যাবেন, ইসি ভোটের ব্যবস্থাপনা করবেন। ব্যবস্থাপনার দিক থেকে আমাদের যা যা করণীয় সব করেছি, করে থাকি এবং করে থাকব।

“ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিতি না থাকার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী নয়,“ বলেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, “প্রতিপাদ্যের মধ্যে একটা স্পিরিট আছে, ফোর্স আছে। নিজের অধিকারকে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হয়। অন্য কেউ এসে আপনার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করে দেবে না।

“শুধু এটুকু বললেই হবে না যে, আমি ভোট দিতে গিয়ে দিতে পারিনি- এটা আপনার ব্যর্থতা। ভোটার হবেন, ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং নিজের অধিকার স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠা করার সর্বাত্মক চেষ্টা নেবেন।”

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভোটার হয়েছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিন। দেশটা গড়ে তোলার জন্য অংশগ্রহণ করুন।”

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী যারা এখনও ভোটার হন নাই, ভবিষ্যতে ভোটার হবে, যারা এ বছর নতুন ভোটার হয়েছেন এবং যারা ইতোমধ্যে ভোটার আছেন – সকলের প্রতি আমাদের আবেদন রইল ভোটার হয়ে ভোট দেবেন, দেশ গড়ায় অংশ নেবেন।”

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠানে ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতার প্রসঙ্গটি তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি ভোটারদের ভোটবিমুখতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। এর কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে তা প্রতিকারের প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

“যে কোনো মূল্যে আইনানুগভাবে ভোটের প্রতি ভোটারদের আস্থার সংকট মোচন করতে হবে। ভোটাররা অবারিতভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিতে পারলেই কেবল জাতীয় ভোটার দিবস পালনের উদ্দেশ্য সফল হবে।”

আলোচনা অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “ঘরে বসে যেন ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, সেজন্য অনলাইনে ভোটদানের ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

“কোন কেন্দ্রে কত ভোট পড়ছে, তাও যেন ভোটাররা দেখতে পারেন, সে ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।”

রোহিঙ্গা ও অন্য দেশের নাগরিকরা যেন ভোটার হতে না পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে সজাগ থাকার তাগিদ দেন আইনমন্ত্রী।

এ ক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

২০০৮ সাল থেকে ডাটাবেইজ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।