শেষের আগের দিন বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়

একুশে বইমেলার বাকি আছে আর মাত্র একদিন। মাসব্যাপী এ মিলন মেলা ভাঙার আগে শুক্রবার ছুটির দিনে ছিল উপচে পড়া ভিড়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2020, 05:19 PM
Updated : 28 Feb 2020, 05:19 PM

এদিন মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তার মধ্যে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। প্রকাশনা সংস্থা ও স্টলগুলোতে কথা বলে জানা গেল, সারাদিন বিক্রিবাট্টাও ছিল ‘ভালো’।

শুক্রবার সকাল থেকেই মেলার প্রবেশপথগুলোতে ছিল মানুষের দীর্ঘ কিউ। বিকেলে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্ত্বর পর্যন্ত বিস্তৃতি পায়। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক যানজট লেগে যায়।

বিকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের হাতে বইয়ের ব্যাগ। মেলা ঘুরে ঘুরে পছন্দের লেখকের বই কিনছেন তারা। আগে থেকে পছন্দ করে রাখা বইয়ের পাশাপাশি মেলায় দেখে পছন্দ করে বই কিনছেন অনেকে।

ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে আসা জাহিদ ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, ‘‘আসব আসব করেও এতদিন আসা হচ্ছিল না। তাই শেষ সময়ে হাতে বেশ সময় নিয়েই বইমেলায় এসেছি।”

পছন্দের বইয়ের একটি তালিকা দেখিয়ে তিনি বলেন, “ডজনখানেক বই তো কিনবই। এরপর বিভিন্ন স্টল ঘুরে যদি পছন্দ হয় তাহলে আরো কিনব।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’হাতে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে এক স্টল থেকে আরেক স্টলে ঘুরছিলেন তাহমিদ। তিনি জানারেন, মেলা থেকে বই কিনতে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে রাতের ট্রেনে ঢাকায় এসেছেন।

ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন এদিন; তাদেরই একজন ইশতিয়াক আলম।

তিনি বললেন, “স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি। ওদের জন্য বই কিনব। ছুটির দিনটা মেলায় কাটিয়ে দিতে চাই।”

শেষ সময়ের বেচাকেনায় তুমুল ব্যস্ততা থাকলেও দোকানিদের দেখা গেল খুশি খুশি। অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, সেবা প্রকাশনী, তাম্রলিপি, ঐতিহ্য, আগামী, পাঞ্জেরী ও সময় প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধিরা সন্তুষ্টির কথাই বললেন।

তাম্রলিপির বিক্রয় প্রতিনিধি কাজল রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই-তিন দিন ধরে মেলায় আমাদের টাইট সময় যাচ্ছে। এখন স্টলে শুধু বই কেনার উদ্দেশ্যে মানুষ আসছে। সেজন্য বিক্রি অনেক ভালো।”

শিশুদের উচ্ছ্বাস

বইমেলার শেষ শুক্রবারে শিশুদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিলো শিশুপ্রহর। মেলার শেষ সময়ে নিজেদের পছন্দমত বই কিনেছে ছোট্ট সোনামনিরা। তাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি বিক্রেতারাও খুশি।

শিশুপ্রহরে শিশু চত্বর ঘুরে দেখা গেল, বাবা-মায়ের হাত ধরে শিশুরা নিজের পছন্দের বই দেখছে ও কিনছে। শেষ সময়ে ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। শিশু চত্বরে বই কেনার পাশাপাশি শিশুরা উপভোগ করেছে সিসিমপুরের আয়োজনে বিশেষ পরিবেশনা।

স্টলে পছন্দের বই খুঁজছে এক কিশোরী। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

কিশোর আশিক উল্লাহ বিজয়কে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন তার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা এনায়েত উল্লাহ। বললেন, “বইমেলার পরিসর অনেক বড়। গণমাধ্যমে যা দেখি, তার থেকেও বড়। ছেলের শখ বইমেলা আসা। সেই শখ পূরণ করতেই তাকে নিয়ে আসা, সঙ্গে নিজেও চলে এলাম।”

আশিক উল্লাহ বিজয় বললো, ‘‘আমি গণিত এবং বিজ্ঞানের কিছু বই কিনেছি এবং সারাদিন মেলা ঘুরে আজ আরও অনেক বই কিনব।”

পঙ্খিরাজ প্রকাশনীর প্রকাশক দেওয়ান আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘“সকাল থেকেই শিশুদের উপস্থিতির পাশাপাশি বইয়ের বিক্রিও বেশ ভালো। মেলা এখন শেষ সময়ে, যারাই মেলায় আসছেন, তারা সবাই প্রায় বই কিনছেন। ছোটদের বইগুলোর মধ্যে গল্পের বইয়ের প্রতিই শিশুদের ঝোঁক বেশি।’’

মূলমঞ্চের আয়োজন

শুক্রবার বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে হয় আবুল কাসেম রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন: জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। তাতে প্রবন্ধ পাঠ করেন অসীম সাহা। আলোচনায় অংশ নেন কাজী রোজী, এম এম আকাশ এবং নাসিমা আনিস। লেখকের বক্তব্য দেন আবুল কাসেম। সভাপতিত্ব করেন আতিউর রহমান।

প্রাবন্ধিক বলেন, “বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক নেতা। কিন্তু কী রাজনীতি, কী অর্থনীতি, কী বিশ্বব্যবস্থা- সর্বক্ষেত্রেই তার বিস্ময়কর দক্ষতা আমাদের বিস্মিত না করে পারে না। তাই দেশ স্বাধীন হবার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি যে দূরদর্শী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, তাকে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ শুধু স্বাগত জানাননি, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধুর বিস্ময়কর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলো কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাকেও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন।”

বইয়ের লেখক বলেন, “বাংলাদেশের মাটি থেকে উত্থিত উন্নয়নের দর্শনই ছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন। এ মহান রাজনীতিবিদ কেবল রাষ্ট্রদর্শনই নয়, অর্থনীতি সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন। বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন সে বিষয়গুলো এ গ্রন্থে তুলে আনার চেষ্টা করেছি।”

সভাপতির বক্তব্যে আতিউর রহমান বলেন, “রাজনীতির মহান কবি বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথাই ছিল মানুষ এবং মানুষের কল্যাণ। তিনি যেমন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন, তেমনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে অর্থনৈতিক নীতিও নির্ধারণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে এ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সমাপনী অনুষ্ঠান 

শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। 

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী ও সাগুফতা শারমীন তানিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২০, শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে তিনটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০, শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২০ এবং এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ দেওয়া হবে।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রাত ৮টায় সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন রূপা চক্রবর্তী ও হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করবেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং খায়রুল আনাম শাকিল। সবশেষে রয়েছে লেজার শো।