বইমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ

লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ করা হল একুশের বইমেলায়; দাবি উঠল তার হত্যামামলার বিচার শেষ করার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 06:56 PM
Updated : 27 Feb 2020, 06:56 PM

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ।

কয়েক মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। ওই বছর ১২ অগাস্ট মিউনিখে মৃত্যু ঘটে তার।

হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার পরদিন তার ছোট ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর সেই মামলাটি হত্যামামলায় রূপান্তরিত হয়।

বৃহস্পতিবার হামলার ষোড়শ বার্ষিকীতে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ফোরামের উদ্যোগে হুমায়ুন আজাদ স্মরণে একটি সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে আমরা হুমায়ুন আজাদের হত্যার বিচার দাবি করে আসছি। বিচার হচ্ছে, মামলার রায় এখনও হয়নি।

“আমি বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাই, আমাদের এভাবে বঞ্চিত করবেন না। আমরা সবাই যেন হুমায়ুন আজাদ হত্যার বিচার পাই।”

তিনি বলেন, “হুমায়ুন আজাদের হত্যার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তার আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।”

হুমায়ুন আজাদের মেয়ে মৌলি আজাদ বলেন, “আমি পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, তাদের কাছে যেন বার্তাটি যায় যে হুমায়ুন আজাদের পরিবার তার হত্যার বিচার চায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা আমার আব্বার হত্যার বিচার করুন।”

হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবির বলেন, “এই বাংলা একাডেমিতে অনেকের নামে অনেক মঞ্চ আছে, কক্ষ আছে। আমরা চাই, এখানে হুমায়ুন আজাদের নামে কিছু একটা করা হোক।”

তার এই দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

সভায়  লেখক প্রকাশক পাঠক ফোরামের সভাপতি ওসমান গনির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি কাজী রোজী, শিল্পী ফকির আলমগীর, শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, গবেষক আসাদুজ্জামান আসাদ, কবি পিয়াস মজিদ, কবি জাহিদুল হাসান।

আলোচনা সভা

মেলার ২৬তম দিন বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু নানা বর্ণে নানা রেখায়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

ডাকসুর প্রথম নারী ভিপি মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশ নেন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, এনামুল করিম নির্ঝর ও আমীরুল ইসলাম।

গ্রন্থের সম্পাদক শামসুজ্জামান খান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধু নানা বর্ণে নানা রেখায় বইয়ে। গ্রন্থটির অবয়ব ও সংকলিত লেখাগুলো থেকে একে কিশোর পাঠকদের জন্য রচিত মনে হওয়াই স্বাভাবিক। গ্রন্থের প্রতিটি লেখাই তাৎপর্যপূর্ণ কেননা দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকগণ তাদের লেখায় বঙ্গবন্ধুকে নানা মাত্রায় এখানে উপস্থাপন করেছেন।”

মেলায় এদিন ‘আজ লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, সালমা বাণী, মতিন্দ্র মানখিন ও নওশাদ জামিল।  

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, বদরুল হায়দার, তপন বাগচী ও খালেদ উদ্-দীন। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী সামিউল ইসলাম পোলক ও সংগীতা চৌধুরী। পুঁথিপাঠ করেন জালাল খান ইউসুফী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মিলন কান্তি দে’র রচনা ও নির্দেশনায় এবং দেশ অপেরা’র পরিচালনায় যাত্রাপালা ‘রক্তে রাঙানো বর্ণমালা’।

শুক্রবারের অনুষ্ঠান

শুক্রবার বইমেলার ২৭তম দিনে মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত থাকবে শিশুপ্রহর।  

বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে আবুল কাসেম রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়নদর্শন : জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’  শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন অসীম সাহা। আলোচনায় অংশ নেবেন এম এম আকাশ ও নাসিমা আনিস। সভাপতিত্ব করবেন আতিউর রহমান।