রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ’পূর্ণ সহায়তার’ প্রতিশ্রুতি কম্বোডিয়ার

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পূর্ব-এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 04:06 PM
Updated : 16 Dec 2021, 07:24 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় যৌথ কমিশনের বৈঠক শেষে এই প্রতিশ্রুতির কথা জানান আসিয়ানের সদস্য দেশ কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী ইট সোফিয়া।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে কম্বোডিয়ার সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

”আমি তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছি, বাস্তুচ্যুত এই লোকদের ফেরাতে আসিয়ানের নেতৃত্বাধীন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা দেবে কম্বোডিয়া।”

তার আগে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “মিয়ানমার যেহেতু আসিয়ান মেম্বার এবং কম্বোডিয়াও সক্রিয় সদস্য, আসিয়ানের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তারা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা আরও বাড়াবেন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কমন বন্ধু হিসাবে তারা এই দায়িত্বটি পালন করবেন সামনের দিনে।”

২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি মানুষ। ওই অভিযানে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের ভয়ঙ্কর সব বিবরণ উঠে আসে তাদের কথায়।

আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার শরণার্থীদের ফেরত নিতে চুক্তিবদ্ধ হলেও রাখাইনে নিরাপদে বসবাসের পূর্ণ নিশ্চয়তা পাওয়ার আগে রোহিঙ্গারা ফিরতে চাইছে না। এক্ষেত্রে মিয়ানমারও গড়িমসি করছে।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও দেশের সহযোগিতা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ।

কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে আসিয়ান জোটে থাকা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি এর আগেও দিয়েছে। দশ সদস্যের এই জোটে ব্রুনাই দারুসসালাম, লাওস, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামও রয়েছে।

প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার সংকট মেটাতে ভূমিকা রাখতে কম্বোডিয়াকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

”আমরা যেটা বলেছি, মিয়ানমারের যে সমস্যাটি, সেটা হলো তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। সে জায়গায় আস্থা তৈরির উদ্যোগ হিসাবে আসিয়ান প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি সুশীল সমাজ বা রাজনৈতিক নেতাদের মিলে মিয়ানমারে সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাতে তাদেরকে বিশ্বাস দিতে পারেন ও বোঝাতে পারেন-সেই প্রস্তাব আমরা দিয়েছি।

”যখন তারা ফেরত যেতে শুরু করবেন, তারপরে পরিবেশটা যাতে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ থাকে এ বিষয়ে আমরা যে প্রস্তাবনা দিয়েছি, সেটি তারা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন।”

এ বিষয়ে কম্বোডিয়ার প্রতিমন্ত্রী সোফিয়া বলেন, “রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান বের করে আনবে বলে আশা করি। এ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজ করবে কম্বোডিয়া, বাংলাদেশের সব প্রস্তাবের আলোকে ব্যবস্থা নেবে।”

বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক হবে কম্বোডিয়ায়

মুজিববর্ষে উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কম্বোডিয়ায় একটি সড়কে নামকরণ হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান দুই প্রতিমন্ত্রী।

আগের দিন বুধবার ঢাকার বারিধারার কূটনৈতিক জোনের পার্ক রোডের নাম পরিবর্তন করে কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা ‘নরোদম সিহানুক সড়ক’ নাম দেয় সরকার।

যৌথ কমিশনের বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং ফরেন অফিস কনসালটেশন আয়োজন নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই প্রতিমন্ত্রী।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার ভূমি ব্যবহার করে পাট ও চালসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনের সুযোগ বাংলাদেশের কৃষক ও শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশের এক্সপার্টিজ আছে পাট এবং চাল উৎপাদনে। তাদের জনসংখ্যা আমাদের ১০ ভাগের এক ভাগ এবং দেশের আয়তন আমাদের চেয়ে প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার বড়।

”তাদের যে জমিগুলো রয়েছে বাংলাদেশের কৃষক ও ইন্ডাস্ট্রির লোকজন ব্যবহার করতে পারেন কীভাবে সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছি। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় পর্যায়েও আলাপ হবে।”

আসিয়ান দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত পাট বিক্রির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।