হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আশরাফ উল হক কাজলের নেতৃত্বে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে আবদুল্লাহর শরীরে জটিল এই অস্ত্রোপচার হয়।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালের সভাকক্ষে আবদুল্লাহর বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. কাজল বলেন, “এখন আবদুল্লাহ সুস্থ আছে এবং মায়ের বুকের দুধ পান করছে, স্বাভাবিকভাবে প্রসাব-পায়খানাও করছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছুটি দেওয়ার মত অবস্থায় সে এখন আছে।’’
ভবিষ্যতে তার বেড়ে উঠতে কোনো অসুবিধা হবে না জানিয়ে সার্জারি বিভাগের প্রধান বলেন, “আমরা তার ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি, তার ভেতরে কোনো অর্গানে এখন সমস্যা নেই। একটি সুস্থ-সবল শিশু হিসেবেই বেড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।”
শারীরিক অস্বাভাবিকতার কারণে বাবা-মা তাকে নিয়ে যান নোয়াখালী সদর হাসপাতালে। চিকিৎসকদের পরামর্শে গত ২৮ জানুয়ারি আবদুল্লাহকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন সালাউদ্দিন ও পারভীন।
সে সময় আবদুল্লাহর শরীরে ছিল চারটি সুগঠিত হাত পা। বাড়তি অংশে নিতম্ব, জননাঙ্গ, প্রসাব ও পায়খানার রাস্তা সবই সুগঠিত ছিল, কিন্তু মাথা ও বুকের অংশ বিশেষ অনুপস্থিত ছিল। জন্মের পর থেকে দুটি রাস্তা দিয়েই তার প্রসাব ও পায়খানা হত। সুস্থ শিশুটির নাভীতে বড় একটি ছিদ্র ছিল যার মাধ্যমে নাড়ির অংশবিশেষ যাওয়া আসা করত।
ডা. কাজল জানান, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের বাড়তি অংশকে বলা হয় প্যারাসাইটিক টুইন বা পরজীবী যমজ।
“আগাছা যেরকম অন্য গাছ থেকে রস শুষে নিয়ে বেঁচে থাকে, তেমনি এই অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি আবদুল্লাহর শরীর থেকে পুষ্টি নিয়ে বড় হচ্ছিল। কিন্তু মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড না থাকায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ক্ষমতা তার ছিল না।”
বিশ্বে এ ধরনের শিশু জন্মের হার প্রায় দশ লাখে একটি। এর আগে ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি শিশুর দেহে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।
ডা. কাজল বলেন, ‘‘আজকাল অনেকেই বাচ্চা হওয়ার জন্য ওষুধ খায়, এর ফলে একটি চক্রের মধ্যে একাধিক ডিম্বাণু নির্গমন হয়, তাতে একবারে একাধিক ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সে কারণে আজকাল টুইন প্রেগনেন্সির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই অপারেশনটি অনেক জটিল ছিল। সেজন্য আমরা আগাম কিছু বলতে পারিনি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় এটি বড় ধরনের সাফল্য।
“অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চিকিৎসকরা অপারেশনটি সফল করেছেন, সেজন্য তারা প্রসংশার দাবি রাখেন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঝুঁকির পরিস্থিতি সফলতার সাথেই সম্পন্ন করার সক্ষমতা আমাদের দিন দিন বাড়ছে।”
শিশুটির বাবা সালাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে আবদুল্লাহর জন্মের পর তার অবস্থা দেখে তারা অবাক হয়েছিলেন।
এক মাস পর ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় পেয়ে চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার বাচ্চার জন্য সবাই দোয়া করবেন।”