বইমেলা ‘শতভাগ ধূমপানমুক্ত’ রাখার দাবি

একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণের বাইরে আগামী বছর থেকে 'স্মোকিং জোন' রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে কয়েকটি তামাকবিরোধী সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2020, 02:27 PM
Updated : 25 Feb 2020, 02:27 PM

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে বইমেলা প্রাঙ্গণ ‘শতভাগ ধূমপানমুক্ত’ রাখার দাবি জানানো হয়। 

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সচিব সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ ধূমপানমুক্ত রাখতে বাংলা একাডেমি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টা প্রসংশনীয়। কিন্তু কিছু মানুষের বেপরোয়া ধূমপানের ফলে মেলায় আসা নারী ও শিশুসহ অধূমপায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

“বইমেলা থেকে বই কিনে মানুষ নিজেদের জ্ঞানার্জনের পথ প্রসারিত করে। দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে এসে শুধু বই সংগ্রহ করেন না, মেলার পরিবেশও তাদের মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ ধরনের জনসমাগমস্থল কোনোভাবেই ধূমপানের স্থান হতে পারে না।”

গত শুক্রবার বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লিটলম্যাগ চত্বরে সিগারেট ধরাতে গিয়ে এক প্রচ্ছদশিল্পী পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ ওঠে।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ পরদিন জানান, আগামী বছর থেকে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে ‘স্মোকিং জোন’ থাকবে, সেগুলো হবে মেলার মূল প্রাঙ্গণের বাইরে।

এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, “সুইমিংপুলের একটা কর্নারে কেউ যদি মল ত্যাগ করে, তাহলে সেটা পুরো সুইমিংপুলকেই নষ্ট করবে। একইভাবে বইমেলায় কোনো এক কর্নারে কেউ স্মোক করলে সেটা পুরো মেলাতেই ছড়াবে। এখানে আসা হাজার হাজার শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়বে। আমরা নির্দিষ্টভাবে বলে দিতে চাই, আগামী বইমেলায়  কোনো ধরনের স্মোকিং জোন রাখা যাবে না।”

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প বিষয়ক সম্পাদক শুভ কর্মকার বলেন, “আমরা যারা ধূমপান করি, তারা ধরে নিয়েছি যে, আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু যারা ধূমপান করেন না, তারা তো নিষ্পাপ। মেলা প্রাঙ্গণে অনেক নারী ও শিশুরা আসেন, যারা কখনও ধূমপান করেন না। তাদেরকে রক্ষা করতে এসব জমায়েত তথা মেলা প্রাঙ্গণ, খেলাধুলা- ইত্যাদিতে ধূমপান করা যাবে না “

নতুন করে পরীক্ষা: প্রজ্ঞার বিস্ময়

তামাকে ও তামাকজাত পণ্যে লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামসহ সাতহাজারের বেশী ক্ষতিকর উপাদান থাকার পরেও সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের এসব বিষয় নতুন করে পরীক্ষা করার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা।

এর পেছনে তামাক কোম্পানির ‘কূটকৌশল’ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নতুন করে এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসার সুযোগ পায়, যা তাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরি করে দেয়।”

প্রজ্ঞা বলছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বাংলাদেশে উৎপাদিত পাঁচটি ব্রান্ডের সিগারেট বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পরীক্ষায় ক্ষতিকর উপাদান লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। সিগারেটে থাকা এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক ধূমপায়ী ও পরোক্ষ ধূমপায়ীদের শরীরে কোন ধরনের প্রভাব ফেলছে তা জানতে চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

তামাকে ও তামাকজাত পণ্যে যে ওইসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তা বিবেচনায় রেখেই ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) প্রণয়ন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ২০১২ সালে তামাকে থাকা লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামসহ ৯৩টি ক্ষতিকর উপাদানের তালিকা প্রকাশ করে জানায়, এসব উপদান ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

“বহু আগেই এসব বিষয় প্রমাণিত হওয়ার পরেও নতুন করে পরীক্ষা করার পেছনে তামাক কোম্পানির কোনো কূটকৌশল থাকার বিষয়টি এড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেননা এ ধরনের নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।”   

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম করার ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘কূটকৌশল’ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় প্রজ্ঞার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।