৮৮% শিশুই সহিংস আচরণের শিকার: জরিপ

বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংস আচরণের প্রবণতা বাড়ছে বলে সরকারি এক জরিপে উঠে এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2020, 11:48 AM
Updated : 24 Feb 2020, 12:40 PM

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ শীর্ষক জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে।

এর আগে ২০১৩ সালে বিবিএস পরিচালিত জরিপে এই হার ছিল ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ।

সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহযোগিতায় এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, লালনপালনকারীদের মাধ্যমেই শিশুরা সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে বেশি।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন পরিচালক মো. মাসুদ আলম।

পরিচালক বলেন, জরিপে এসেছে দেশে ১৫ বছরের নিচে প্রতি ১০ জনের নয়জন শিশুই তাদের অভিভাবক বা সেবা প্রদানকারীদের দ্বারা কোনো না কোনোভাবে সহিংসতার শিকার হয়।

মাসুদ জানান, সারা দেশে ২৪ হাজার ৬০০ শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সহিংসতার এই তথ্য পেয়েছেন তারা। তবে কোনো শিশুর সঙ্গে কথা বলেননি।

সহিংস আচরণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “শুধু মারধর নয়, হাল্কা বকাবকি কিংবা ধমককেও আমলে নেওয়া হয়েছে।”

জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখনও হাজারে ৮ জন নবজাতক মারা যায়। প্রতিহাজার দুগ্ধ পোষ্য শিশুর ৩৪ জন মারা যায়। ২০১৩ সালের জরিপে এই হার ছিল ৪৬ জন।

বর্তমানে দেশের জন্ম হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৩ সালেও একই হার ছিল।

জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখনও হাজারে ৮ জন নবজাতক মারা যায়। প্রতিহাজার দুগ্ধ পোষ্য শিশুর ৩৪ জন মারা যায়। ২০১৩ সালের জরিপে এই হার ছিল ৪৬ জন।

বর্তমানে দেশের জন্ম হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১৩ সালেও একই হার ছিল।

জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এখনও ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে বিবাহিত। এছাড়াও ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ের ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়। আর ১৯ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মেয়ের।

৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় মাত্র ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের জরিপে এ হার ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

জরিপে দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়লেও মাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে পড়ার হারও বেড়ে গেছে।

বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আগের জরিপে এ হার ছিল ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ছে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। আগের জরিপে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে ১৭ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শ্রমের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে স্কুলে যাওয়া শিশু ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, স্কুলে না যাওয়া শিশু ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিসেফের কর্মকর্তা অ্যালেইন বালানডি ডমসাম।

‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’র পরিচালক মাসুদ আলম জানান, ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে ১ জুনের মধ্যবর্তী সময়ে ৬১ হাজার ২৪২টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ছয় বছরে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের শতকরা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাসায় রয়েছে কম্পিউটার।

দেশের শতকরা ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এছাড়া শতকরা ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়িতে মোবাইল ফোন রয়েছে।

বর্তমানে দেশে নারীদের শিক্ষার হার বেড়ে ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়। ছয় বছর আগের জপিপে এ হার ছিল ৮২ শতাংশ।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে পরিবারের গড় আকার ৪ দশমিক ৩ জন। দেশের ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের বয়স ১৮ বছরের নিচে।

গড় প্রজনন হার ২ দশমি ক ৩ জন। কিশোরীদের সন্তান জন্মদানের হার ৮৩ শতাংশ।

দেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা ব্যবহার করে।