পতাকার মান রাখতে চাই সর্বোচ্চ ত্যাগ: রাষ্ট্রপতি

জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2020, 12:44 PM
Updated : 23 Feb 2020, 12:44 PM

রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে ‘আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে ১, ২, ৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি এবং ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি’কে জাতীয় পতাকা (ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড) প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন এবং কর্তব্যনিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সবসময় প্রস্তুত থাকবেন।

“আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ইউনিটের সদস্যগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত থেকে জাতীয় পতাকার সম্মান রক্ষার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হবে না।”

রাষ্ট্রপতি বলেছেন, আবহমান কাল থেকেই যুদ্ধের ময়দানে জাতীয় মর্যাদার প্রতীক ‘পতাকা’ বহন করার রীতি প্রচলিত আছে। পতাকা হল জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সব সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব।

“জাতীয় পতাকা বহনের দুর্লভ সুযোগ সকলের জীবনে আসে না। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে-কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। আজ সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক ‘জাতীয় পতাকা’ আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হল।”

এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তার সুদূর প্রসারী এই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোর বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

“বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এ ভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে অবদান রাখতে হবে।

“একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী যে কোনো দেশের জন্য অপরিহার্য। আধুনিকায়নের সাথে প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের সকল সদস্যকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় কারিগরি এবং পেশাগত জ্ঞান অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় যে কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

“জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা মিলিটারি একাডেমিতে পাসিং আউট অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘তোমাদের এখন একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, দেশ যখন আমাদের আছে, মাটি যখন আমাদের আছে, বাংলাদেশের সোনার মানুষ যখন আছে, তখন আমরা সবই পারবো। যদি আমরা সোনার ছেলে তৈরি করতে পারি, তাহলে ইনশাল্লাহ আমার ‘স্বপ্নের সোনার’ বাংলা একদিন অবশ্যই হবে। আমি হয়তো দেখে যেতে পারবো না। কিন্তু তা হবে’।”

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিটি সদস্য স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে স্বাগত জানান।

রাষ্ট্রপতি ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সালাম গ্রহণ করেন, প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং অনুষ্ঠান শেষে ফটোসেশনে অংশ নেন ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, বেসামরিক বিশিষ্টজন, কূটনৈতিক, রাষ্ট্রপতির সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।