গৃহহীনকে ঘর করে দিতে হবে: নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের কোন মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে সেজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‌

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2020, 01:21 PM
Updated : 22 Feb 2020, 04:39 PM

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলীয় আলোচনা সভায় এই প্রত্যাশা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী যে যেখানে আছেন, যে যার মতো পারেন সহযোগিতা করবেন বাংলাদেশের একটা মানুষও যেন গৃহহারা বা গৃহহীন না থাকে। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খোঁজ নিতে বলেছি নদীভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদেরকে আমরা ঘর করে দেব, আর যারা ভূমিহীন, গৃহহীন তাদেরকেও আমরা ঘর তৈরি করে দেব।

“প্রত্যেকটা মানুষের একটা ঠিকানা হবে।” 

গত ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

“শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে না, আমরা প্রযুক্তি শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে আজকে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়া থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন সব কিছু আমরা ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছি।” 

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই ত্যাগ কখনও বৃথা যায় না। আত্মত্যাগ বৃথা যায় না। বৃথা যেতে আমরা দেব না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলব। ‘মুজিববর্ষ’ সফল-স্বার্থকভাবে আমরা উদযাপন করব।”

আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘ এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ মর্যাদা পেয়েছে। এখন উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আমাদের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে, যেখানে এক সময় সবাই অবহেলার চোখে দেখত।”  

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাঙালি। আমাদের উপর প্রথম আঘাত এলো ভাষার উপর। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার সংস্কৃতির উপর, তার ভাষার উপর, তার অস্তিত্বের উপর আঘাত হানা হয়।”

সেই থেকেই আন্দোলনের যাত্রা শুরু উল্লেখ করে তিনি বলেন, “১৯৪৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়েছিল। সেই সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। পশ্চিম পাকিস্তানে কিন্তু বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন ভাষা। উর্দু তাদের ওখানে চলে। কিন্তু আমাদের এই ভূখণ্ডে তো আমরা এই উর্দু তো কেউ জানি না। কিন্তু আমাদের ওপর সেটা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হল।

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তখন পূর্ব বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন এবং মার্চ মাসে তিনি একটা উদ্যোগ নেন। কারণ এই ভাষার উপর আঘাত আবারও আসে আমাদের এই ভূখণ্ডে। ১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে বলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে। এই ঘোষণার সাথে সাথেই আমাদের ছাত্রসমাজ তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এমনকি তার বাড়িও ঘেরাও করতে চায়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সময় এফএইচ হলে ২রা মার্চ একটা সভা হয়, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরই উদ্যোগে ছাত্রলীগ তমুদ্দিন মজলিস এবং অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দল মিলে তারা একটা সভা করে এবং সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য ছাত্র সমাজ আন্দোলন শুরু করবে, একটা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এবং ১১ই মার্চ ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট ডাকা হয়। ওই ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে সেটা ছিল বাংলা ভাষা দাবি দিবস।”

‘পিকেটিং’ করার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আরও অনেক ছাত্রনেতা তখন গ্রেপ্তার হন ‌উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই সময় নাজিম উদ্দিন সরকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। ১৫ মার্চ সকলকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৬ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একটা জনসভা হয়। এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।”

এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল বলে দুঃখের সঙ্গে বলেন মেয়ে শেখ হাসিনা।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হত্যার সাথে সাথে সমস্ত নাম নিশানা সব মুছে দিল। ভাষা আন্দোলন থেকে তাকে মুছে দিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকেও মুছে দিল। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। আজকে তা প্রমাণিত সত্য।”

বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বারবার তারা ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।

“সব থেকে বড় পাওয়া আজকে ২০২০ সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি। ১৭ই মার্চ তার জন্মদিনে আমরা তার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। ২০২১ এর ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব।”