ভোটের পোস্টারে এবার আঁকার খাতা

ঢাকা সিটি নির্বাচনে ব্যবহৃত প্রার্থীদের পোস্টার দিয়ে নানা শিক্ষা উপকরণ তৈরির ধারাবহিকতায় এবার শিশুদের জন্য ছবি আঁকার খাতাও তৈরি হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2020, 10:52 AM
Updated : 22 Feb 2020, 10:52 AM

ভোটের পর সংগ্রহ করা প্রায় ২০ টন পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটে এসব উপকরণ তৈরির কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ইতিমধ্যে কিছু খাতা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে। শনিবার ভোটের পোস্টারে আঁকার খাতা একুশের বইমেলায় আনা হয়েছে বিদ্যানন্দের স্টলে।

ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক সালমান ইয়াসির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা প্রথমবার ৫০০ খাতা শিশুদের দিয়েছেন। সংগ্রহ করা পোস্টার-লিফলেট দিয়ে নানা আকারের ৪০ হাজার খাতা তৈরির আশা করছেন তিনি।

“আমাদের হাতে বানানো খাতায় বাচ্চারা লেখা শুরু করেছে। কিন্তু এগুলো আরও ভালোভাবে তৈরি করার জন্য আমরা কেরানীগঞ্জের একটি বাউন্ডিং প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছি। খাতাগুলো সুন্দর করে বানানো হবে। উপরে বর্ণিল কাভারসহ প্রতিটি খাতায় ১২০টি পৃষ্ঠা থাকবে।”

এবার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রাজধানী ছেয়ে যায় প্লাস্টিকে মোড়া পোস্টারে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্লাস্টিকে মোড়া পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড লেমিনেট ব্যবহার বা প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশও দেয় হাই কোর্ট।

ভোটের পোস্টার দিয়ে চলছে খাতা তৈরির কাজ

নির্বাচনের পর এসব পোস্টার কি হবে তা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পোস্টার দিয়ে শিক্ষা উপকরণ বানানোর ঘোষণা দেয়। তাদের স্লোগান ছিল ‘আপনার কাছে যা বর্জ্য, অন্যের জন্য তা সম্পদ’।

১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার পরদিন মিরপুর এলাকা থেকে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা পোস্টার সংগ্রহে নামেন।

এ কাজ করতে গিয়ে মেয়র ও অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানান সালমান ইয়াসির।

“মানুষের সাড়া ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। অনেক প্রার্থী, সাধারণ মানুষ নিজেদের উদ্যোগে পোস্টার পৌঁছে দিয়ে গেছেন। আমরা চিন্তায় ছিলাম মানুষের সাড়া পাব কিনা। কিন্তু দেখা গেছে আমরা যতটা চেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের চারজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।”

সালমান জানান, সব পোস্টার দিয়ে খাতা বানানো যাবে না। বাকীগুলো দিয়ে খাবার প্যাকেটসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ, ব্যানার দিয়ে বানানো হচ্ছে স্কুল ব্যাগ, বাজারের ব্যাগ এবং কলম-পেন্সিল রাখার ব্যাগ।

পোস্টার দিয়ে শিক্ষা উপকরণ তৈরির কর্মসূচির ফলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক থেকে অনেক দ্রুতই পোস্টার সরে গেছে।

ভোটের ব্যানারে তৈরি হচ্ছে স্কুল ব্যাগও

জনহিতকর এ প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরে গর্ববোধ করছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, অব্যবহৃত লিফলেট-পোস্টার কাজে আসা তিনি মানসিক স্বস্তি পেয়েছেন।

“এটা উদ্ভাবনী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। আমরা যে চাইলেই পারি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। আমার কাছে খুবই আনন্দ লাগছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরে গর্বিত বোধ করছি।” 

“সবাই মিলে কাজ করলে কিছুই যে অসম্ভব না, সেটা এই পোস্টার সরানোর প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রমাণ হয়ে গেল,” বলেন আতিকুল ইসলাম।

সামনের নির্বাচনগুলোয় পোস্টার, বিলবোর্ড ও উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর রীতি থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

“আমরা মাইক বাজিয়ে, মিছিল করে শব্দ দূষণ বা পোস্টারিং করে শহরে দৃষ্টিদূষণ করতে চাই। আমরা শোডাউন করে রাস্তা, ফুটপাত দখলও করতে চাই না। আমি অনুরোধ করব ঢাকা-১০ আসনে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে মাইকিংসহ শব্দ দূষণ যেন নিষিদ্ধ করা হয়। বিকল্প ব্যবস্থা যেন ইসি চিন্তা করে দেখে।”

এবার ঢাকার ভোটে উত্তর ও দক্ষিণে ১৩ মেয়র ও কাউন্সিলর মিলিয়ে সাড়ে সাতশ প্রার্থী ছিলেন। মেয়র প্রার্থীদের প্রত্যেকে গড়ে ৪ লাখের বেশি পোস্টার ছাপিয়েছেন। কাউন্সিলররাও ছেপেছেন ৫-১০ হাজার করে। শীতের কুয়াশা থেকে বাঁচাতে অধিকাংশ প্রার্থীর পোস্টার ঝোলানো হয়েছে প্লাস্টিকে মুড়ে বা লেমিনেটিং করে।

কাগজে-কলমে পোস্টারের এই হিসাব প্রার্থীরা দিলেও সঠিক সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অনেকের ধারণা। একটি বেসরকারি সংস্থা সংবাদ সম্মেলন করে এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করে। তাদের দাবি, পোস্টারের সংখ্যা হবে কয়েক কোটি, তাতে আড়াই হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হবে।