রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৬ দলের প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে।
ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটের প্রচারে লেমিনেটেড পোস্টার ব্যবহার ও মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণ নিয়ে সমালোচনা হলে কমিশন ‘বিকল্প’ ভাবতে শুরু করে।
তার অংশ হিসেবেই প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তত কিছু বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির পথ খোঁজতে ইসির এই বৈঠকের আয়োজন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কমিশনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম ইসির প্রস্তাবের মধ্যে ‘ইতিবাচক দিক’ দেখলেও এর বাস্তবসম্মত প্রয়োগ এবং সমান সুযোগ তৈরির নিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তার।
তবে সবার সম্মতি ও সহযোগিতা পেলে ঢাকার এ উপ নির্বাচনে দূষণমুক্ত প্রচার সম্ভব হবে বলে মনে করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির উপ সচিব জিএম সাহতাব উদ্দিন।
দূষণ রোধে ৫টি প্রস্তাব মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ৬ প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের প্রচারে বিধি-নিষেধের বিষয়গুলো আচরণবিধিতে রয়েছে। এর মধ্যে থেকে প্রার্থীরা অনেক কিছুই করতে পারেন।
তিনি জানান, রোববার বেলা ১১টায় প্রার্থীদের সঙ্গে বসবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যরা। ইসির প্রস্তাবের পাশাপাশি প্রার্থীদের কোনো প্রস্তাব থাকলেও তা নিয়েও আলোচনা হবে।
“প্রার্থীদের নিজেদের মতামতের পাশাপাশি দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তও থাকতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিজেদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে ইসির প্রস্তাব প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সবাই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ইসির পাঁচ প্রস্তাব
১. অনুমোদিত মাত্রায় মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে; অনুমোদিত ক্যাম্পে পোস্টার, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা যাবে।
২. পোস্টার ঝোলাতে হবে ইসি নির্ধারিত ২১ জায়গায়; একেকটি জায়গায় পালা করে মাইকিং চলবে।
৩. শোভাযাত্রা-পদযাত্রা সীমিত করতে হবে; প্রত্যেক প্রার্থীকে নির্দিষ্ট দিন ও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
৪. জনসভার জন্য এক বা একাধিক জায়গা নির্দিষ্ট কর দেওয়া হবে; পর্যায়ক্রমে অনুমোদন নিয়ে সভা করতে হবে।
৫. তোরণ নির্মাণ, ফুটপাতে ক্যাম্প, রাস্তায় পথসভা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এসব বিষয়ে একমত হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে ইসি একটি সমঝোতা স্মারক করতে চায় বলে কমিশনের কর্মকর্তারা জানান।
এসব প্রস্তাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “পাঁচটি প্রস্তাবকে আমি স্বাগত জানাই। কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ হোক তা আমরা চাই না। এজন্য কমিশন যে ধরনের প্রস্তাব দেবে তা মানতে চাই। সবার সহযোগিতাও লাগবে।”
তিনি বলেন, রোববরের সভায় নিজে উপস্থিত থেকে কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত দিতে চান তিনি। কোনো কারণে না থাকতে পারলে উপযুক্ত প্রতিনিধি পাঠিয়ে প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করবেন।
বিএনপি প্রার্থী শেখ রবিউল আলম বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে যে কোনো উদ্যোগে তার আপত্তি নেই। তবে প্রচারে সমান সুযোগ তৈরির বিষয়টি কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।
“বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব থাকবে। কমিশনের ৫টি প্রস্তাব সঠিকভাবে প্রতিপালিত কীভাবে হবে সে পদ্ধতি আমরা এখনও জানি না।
“বাস্তবতা হচ্ছে- ক্ষমতাসীন দল এক তরফা সুযোগ পাবে, পাচ্ছে। আমি মনে করি, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর প্রস্তাব থাকতে হবে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সভায় মতামত তুলে ধরব।”
সমভাবে প্রচার, পোস্টার, মাইকিং করা যাবে কিনা তাও দেখার বিষয় রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “এখন যেসব জায়গায় জনসভা, শোভাযাত্রা, পথসভা করার জন্য অনুমতি দেবে, সে সময়ে আওয়ামী লীগ যে আমাদের তা করতে দেবে এ নিশ্চয়তা কীভাবে দেবে কমিশন? কমিশন তাদের প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন করবে তা দেখার বিষয়। বিদ্যমান আচরণবিধিরই কমিশন সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে পারছে না।”
দুই দলের প্রার্থী ছাড়া জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী ও পিডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী আব্দুর রহিম এ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা ১০ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন নব নির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়।
এ আসনে ২১ মার্চ ভোটের দিন সামনে রেখে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল বুধবার। ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যাহারের সুযোগ শেষে ১ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ হবে।
এ আসনের ১১৭টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই এবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে বলে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে।