বইমেলায় পুলিশের হাতে প্রচ্ছদ শিল্পী ‘লাঞ্ছিত’

বইমেলায় সিগারেট ধরাতে যাওয়া এক প্রচ্ছদ শিল্পীকে পুলিশ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2020, 04:46 PM
Updated : 21 Feb 2020, 04:46 PM

চারু পিন্টু নামে তরুণ ওই প্রচ্ছদ শিল্পী লিটল ম্যাগ ‘করাতকল’ ও ‘দ্রষ্টব্য’-এর সঙ্গে কাজ করছেন।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লিটল ম্যাগ কর্নারে ‘করাতকল’ স্টলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।

তাদের ভাষ্য মতে, শিল্পী চারু পিন্টু সিগারেট ধরাতে গেলে দুজন পুলিশ এসে তার শার্টের কলার ধরে গালমন্দ করেন। এক পর্যায়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় আশ-পাশের স্টলের বিক্রয় কর্মীরা   বিক্ষুব্ধ হয়ে বাধা দেন। পরে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

ঘটনার বিবরণে শিল্পী চারু পিন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে অনেকে সিগারেট খায়। আজকে আমাকে একজন একটি সিগারেট দিয়েছিল, সেটি হাতে নেওয়া মাত্রই একজন পুলিশ এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার শার্টের কলার ধরে বলছে, ‘ওরে ভ্যানে নিয়ে চল’, ‘ওরে থানায় নিয়ে চল’।এই বলে আমাকে টেনেহিঁচড়ে লিটল ম্যাগ কর্নার থেকে বের করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে।

“তখন এখানকার ছোট কাগজের সবাই এগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমির লোকজন এসে আমাদের কথাবার্তা শুনেছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। আমি এর বিচারের দাবিতে বাংলা একাডেমির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এস এম শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলায় সিগারেট নিয়ে প্রবেশ করাই নিষেধ। সেখানে উনি একবার ধূমপান করেছেন। পরে আবার করতে গেলে বাধা দেওয়ায় উভয়পক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের মধ্যস্ততায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে।”

তবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘বেপরোয়া’ আচরণের অভিযোগ করে ‘করাতকল’ ও ‘দ্রষ্টব্য’ লিটল ম্যাগের  সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিল্পীর গায়ে হাত দেওয়ার সময় আমি এখানে ছিলাম না। এ ঘটনায় যখন এখানকার বিক্রিয়কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে তখন আমি এখানে দৌঁড়ে আসি। তখন ওই পুলিশ সেখানে আরও ২০-২৫ জন পুলিশ নিয়ে এসে বলে, ‘সব শালারে ধরে নিয়ে যাব’। ওই পুলিশ তখন বেপরোয়া হয়ে পড়ে।”

এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় লিটল ম্যাগ কর্নারে প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাতি জ্বালানো হয়েছে অভিযোগ করে এই সম্পাদক বলেন, “লিটল ম্যাগে যারা লেখেন তারা তো আর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লেখক নয়। তারা তো আসলে বিড়ি-সিগারেট খায়। তবে এখানে একটি ‘স্মোকিং জোন’ রাখলে হয়ত এ ঘটনা ঘটত না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, আজকে সন্ধ্যা বেলায় এখানে আধা ঘণ্টা সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। এটা প্রশাসনের কাছে কখনও কাম্য নয়।”

পুলিশের আচরণের নিন্দা জানিয়ে এফএম শাহীন নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার সময় আমি এখানে ছিলাম। এক প্রকার গায়ে হাত! এটা আমাদের জন্য লজ্জাস্কর। আমরা যারা লেখালেখি করি, সাংবাদিকতা করি, আমরা এই ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, বাংলা একাডেমি খুব দ্রুত বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বসবে এবং আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় আমরা যারা তরুণ লেখক ও প্রকাশক রয়েছি, বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিটল ম্যাগ কর্নারের আহ্বায়কের দ্বায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটির কথা শুনে আমি এখানে এসে বিষয়টা মীমাংসা করে দিয়েছি এবং বিষয়টি মেলা কমিটির সদস্য সচিবকে জানিয়েছি।”

বই মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, “আমি বিষয়টি জেনেছি। এটা নিয়ে আমরা আগামীকাল বসব। এটা নিয়ে নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হয়েছে। আমরা বসে বিষয়টির মীমাংসা করব।”