‘বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার’ পেলেন কীর্তিমান ৫ বাঙালি

জাতিকে মুক্তচিন্তা ও জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করা, ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন এবং উন্নত জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের পাঁচজন কবি, লেখক-অধ্যাপককে ‘বিশ্ব বাঙালি পুরস্কার-২০১৯’ দিয়েছে বিশ্ব বাঙালি সংঘ (বিবাস) নামের একটি সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2020, 05:36 PM
Updated : 19 Feb 2020, 05:36 PM

পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ভারতের ইতিহাসের অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, লেখক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য ও ভাষাযোদ্ধা কবি পার্থ সারথি বসু।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে শিশুদের হাত দিয়ে তাদের এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

বিশ্ব বাঙালি সংঘ (বিবাস) জানায়, নতুন প্রজন্মকে মুক্তচিন্তা ও জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করে জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখায় ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ভারতের বিহারের মানভূম ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শিক্ষার্থীদের বই পড়া আন্দোলনে যুক্ত করে উন্নত জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, ভূ-ভারতে ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় ভাষাযোদ্ধা কবি পার্থ সারথি বসু এবং আসামে সর্বহারা বাঙালিদের পক্ষে কলম ধরায় লেখক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বিশ্বে ৩০ কোটি বাঙালি আছে। কিন্তু বাঙালিরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়ার কথা ছিল অভিন্ন ধারায় মাতৃভাষার মাধ্যমে। কিন্তু সেটা হয়নি।

“আজ আমাদের দেশ তিন ধারা শিক্ষা ব্যবস্থায় শ্রেণি বিভাজনের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে বাঙালি আজ তার অস্তিত্বের সংকটে আছে। আরেকটা কারণ হল, আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করতে পারছি না। উচ্চ-আদালত ও উচ্চ শিক্ষায়ও ব্যবহার করতে পারছি না।”

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “দেশভাগের পর আমরা একটা জাতিকে পেলাম খুব নিঃস্ব অবস্থায়, দুঃখী জাতি হিসেবে। শিক্ষা, অর্থ বিত্ত কিছুই ছিল না। তখন আমার কাছে প্রয়োজন মনে হল, জাতির চেতনাকে বড় করতে হবে। শিক্ষা, মনের বিকাশ, মূল্যবোধ বড় করে তোলা এবং মনের জানালাকে খুলে দেওয়া বড় মন নিয়ে একটা বড় জাতি গঠন করতে পারে।”

বর্তমানে বাংলা সাহিত্যের পণ্ডিত কমে যাচ্ছে মন্তব্য  করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

পুরস্কারদাতাদের অভিনন্দন জানিয়ে অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “দেশভাগের পর খুব নিঃস্ব অবস্থায় একটা জাতি পেলাম আমরা। শিক্ষা, অর্থ, বিত্ত কিছুই ছিল না। তখন মনে হল, জাতির চেতনাকে বড় করতে হবে। শিক্ষা, মনের বিকাশ, মূল্যবোধ বড় করে তুলতে হবে। মনের জানালাকে খুলে দেওয়ার মাধ্যমেই একটা বড় জাতি গঠন করা যেতে পারে।”

কবি পার্থ সারথি বসু  বলেন, “আমাদের নাগরিক হিসেবে দুটো পরিচয় রয়েছে। কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে এক। এ মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কেন্দ্র ঢাকা। এটা বলতে আমার দ্বিধা নেই।”

এর আগে প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মাধ্যমে পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন ও আমন্ত্রিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। আলোক শিক্ষালয়ের শিশু-কিশোররা পরিবেশন করে উদ্বোধনী সঙ্গীত ও নৃত্য। এরপর সেখানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করেন সংঘের কর্মী সালমা বাণী।

অনুষ্ঠানে সংঘের আচার্য রাজু আহমেদ মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা ফরজ আলী।