কয়েকদিন আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে গিয়ে ওয়াহেদ ম্যানশন নামের ভবনটিকে এমনই দেখা গেল; যে ভবনটি ছিল একবছর আগে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া আগুনের উৎসস্থল।
গতবছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়াহেদ ম্যানশনের সাথে আশপাশের কয়েকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের তিন মাস পর ওয়াহেদ ম্যানশন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল মালিকপক্ষ। নিচতলায় বেশ কয়েকটি দোকানের প্লাস্টারও করা হয়। দোতলায় একপাশের দেয়ালও তোলা হয়েছিল, পরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়ায় সরকার সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেয়।
ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে ফল বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, “কয়েক মাস আগে দেখলাম বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছিল। আবার কয়েকদিন পর সরকারের লোকেরা এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সংস্কার কাজ বন্ধই আছে।”
আর পাশের তিনতলা ভবনটি ভেঙ্গে মালিক নতুন ভবন করবে জানিয়ে কালাম বলেন, শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।
তবে ওয়াহেদ ম্যানশনের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর দোতলা ভবনের নিচতলায় ছিল ‘মদিনা মেডিকেল হল’। ভবনটি সংস্কার করা হলেও সেই মেডিকেল আর নেই। ভবনের ওপর ও নিচতলায় ভবন মালিক নিজেই ‘ফুড জংশন’ নামের একটি রেস্তোরাঁ করেছেন।
মদিনা মেডিকেলের মালিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাওসার আহমেদসহ চারজনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল ভতর থেকে।
এই ভবনলাগোয়া ‘লামিয়া স্টোর’ নামের একটি দোকান ছিল স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম আহমেদ লিটনের। আগুনে তার দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন লিটন।
মৃত্যুপুরী থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করা লিটন বলেন, “আবার ঋণ করে দোকান দিয়েছি। যা ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো একদিন পুষিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু যাদের স্বজন চলে গেছে তাদের তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।”
ওয়াহেদ ম্যানশনের উত্তর পাশের আনাস হোটেলের ভেতর থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। আগুনে পোড়া হোটেলটি আর চালু করেননি মালিক। সেখানে ‘ইকরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ এবং ‘মোল্লা বিরানী হাউজ’ নামের দোকান করা হয়েছে।
ওয়াহেদ ম্যানশনের লাগোয়া পূর্বপাশের রাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট আগুনে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সেই ভবনের সিসি ক্যামেরাতেই অগ্নিকাণ্ডের একটি দৃশ্য ধরা পড়ে। এই রেস্তোরাঁটি এখনও চালু আছে।
রেস্তোরাঁর এক কর্মী বলেন, আগুন লাগার পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে চালু হয়েছে তাদের রেস্তোরাঁ।