আজিজ চাকলাদার হত্যা মামলার রায় পেছালো

দুই দশকের বেশি সময় আগে রাজধানীর লালবাগের কাচ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ চাকলাদারকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় পিছিয়ে গেছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2020, 08:38 AM
Updated : 19 Feb 2020, 08:38 AM

বুধবার ঢাকার নয় নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমানের আদালতে এ মামলার রায়ের তারিখ ছিল। তবে রায় লেখা শেখ না হওয়ায়  বিচারক ১ এপ্রিল নতুন তারিখ রাখেন বলে আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী জানান। 

এ আদালতের পেশকার মো. ফোরকান জানান, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ সকাল ৭টায় ঢাকার লালবাগ রোডের বাসা থেকে খুলনা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন আজিজ চাকলাদার ওরফে ঢাকাইয়া আজিজ।

আজিজকে খুঁজে না পেয়ে ছোট ভাই মো. বাচ্চু মিয়া লালবাগ থানায় একটি জিডি করেন। এর ১২ দিন পর একই বছর ১৭ মার্চ মাকসুদ ও আমানুল্লাহ নামে দুজনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অপহরণ মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, মাকসুদ ও আমানুল্লাহর সঙ্গে ভাঙা কাচের ব্যবসা করতেন আব্দুল আজিজ চাকলাদার। তারা দুজন আজিজের কাছে ব্যবসায়িক কারণে ২৫ হাজার টাকা পেতেন। এই টাকা লেনদেনের কারণে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ কারণে মাকসুদ ও আমানুল্লাহ তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

তদন্ত চলাকালে রূপসা নদী থেকে আজিজের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করা হয়। খালিশপুর থানার অন্য একটি মামলার জব্দ তালিকা থেকে এই তথ্য জানা যায় বলে এই মামলার নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়। 

ওই মামলায় ২০০০ সালের ৪ এপ্রিল লালবাগ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রাকিব খান দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। খুলনার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারের নির্দেশে ঢাকাইয়া আজিজকে খুন করা হয় বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে মোট সাতজনকে আসামি করা হলেও মাকসুদ ও আমানুল্লাহকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

যে সাত আসামির নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় তারা হলেন-  খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, লস্কর মোহাম্মদ লিয়াকত, মো. নূরে আলম, ইদ্রিস জামাই, জয়নাল, জামাই ফারুক ও মো. রুস্তম আলী। এই সাত আসামির মধ্যে কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদারকে অন্য মামলায় ২০০৪ সালের ১০ মে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অপর আসামি লস্কর মো. লিয়াকত বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এক আসামি নূরে আলমকে রাষ্ট্রপক্ষ রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করে। দুই আসামি জামাই ফারুক ও ইদ্রিস ২২ বছর ধরে এ মামলায় কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। অপর দুই আসামি জয়নাল ও রুস্তম আলী পলাতক।

অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০০০ সালেই এই মামলার অভিযোগ গঠন হয়। এরপর হাই কোর্টের আদেশে মামলাটি দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে গেলে ২০১৭ সালে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ছয়জন এবং রাজসাক্ষী হিসেবে নূরে আলমের সাক্ষ্য নেয় আদালত। এরপর মঙ্গলবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য করে আদালত।

রাজসাক্ষী থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। তবে কারাগারে থাকা দুই আসামি জামাই ফারুক ও ইদ্রিসের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো আশা করছেন, তার দুই মক্কেল খালাস পাবেন।

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এই রাজসাক্ষী (আসামি নূরে আলম) হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি। শুধু এরশাদ শিকদারের অন্য হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন।

তাছাড়া রূপসা নদী থেকে উদ্ধার করা মাথার খুলি ও হাড় আজিজের কি না- তা প্রমাণিত হয়নি দাবি করে টিটো বলেন, “ঢাকাইয়া আজিজের কোনো মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও হাড্ডির কোনো সুরতহাল, ময়নাতদন্ত বা ডিএনএ টেস্ট করা হয়নি।

“আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে সাক্ষ্যের সময় জেরা করেছিলাম, ১৯৯৮-৯৯ সালে রূপসা নদীতে কয়টি নৌকাডুবি হয়েছে বা তাতে কেউ হতাহত হয়েছে কি না সেগুলো কি নোট নিয়েছিলেন? তিনি তা বলতে পারেননি।”