মেলার প্রথম ভাগে বই এসেছে প্রায় আড়াই হাজার

মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার মধ্যভাগ নাগাদ নতুন বই এসেছে দুই হাজার ৪৭৫টি, এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৫টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2020, 06:16 PM
Updated : 18 Feb 2020, 06:24 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বইমেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব ও পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জী, মেলা কমিটির সদস্য-সচিব জালাল আহমেদ ও স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার একুশে বইমেলার একটি স্টলে বইপ্রেমীদের ভিড়।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানান, এসব প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গল্পগ্রন্থ ৩৩৮টি, উপন্যাস ৩৯৯টি, প্রবন্ধগ্রন্থ ১৩৫টি, কবিতাগ্রন্থ ৭২০টি, গবেষণাগ্রন্থ ৪৭টি, ছড়ার বই ৪৭টি, শিশুতোষ গ্রন্থ ১০৮টি, জীবনীগ্রন্থ ৮০টি, রচনাবলী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ৮৮টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ ৭৫টি, নাটক ১১টি, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ৫২টি, ভ্রমণ কাহিনী ৪৪টি, ইতিহাসমূলক গ্রন্থ ৫৪টি, রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ ৫টি, চিকিৎসা-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গ্রন্থ ১৬টি, রম্য বা ধাঁধা বিষয়ক ১৮টি, ধর্মীয় গ্রন্থ ৯টি, অনুবাদ গ্রন্থ ২৭টি, অভিধান বিষয়ক ৫টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা কাহিনী ৪১টি এবং অন্যান্য ১৫২টি।

একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের পরিকল্পিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক শতগ্রন্থের অংশ হিসেবে আজ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ১৮টি নতুন গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে।”

মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ঘিরে পাঠকের বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা আমাদের আনন্দিত করেছে। ইতোমধ্যে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটির প্রথম দুই সংস্করণ ২০ হাজার ও ৩০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার বই বিক্রি শেষ হয়েছে।”

সোমবার পর্যন্ত বাংলা একাডেমির নিজস্ব বিক্রি এক কোটি ৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবারের নতুন বই

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার একুশে বইমেলার একটি স্টলে বইপ্রেমীদের ভিড়।

মঙ্গলবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার সপ্তদশ দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৭টি। এর মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল) থেকে এসেছে আনন্দময়ী মজুমদারের শিশু বিষয়ক বই ‘মা-বেলার ডায়েরি’, তন্ময় ইমরানের উপন্যাস ‘জোনাক স্নানে জয়তী’ এবং হাসান মাহমুদ রচিত ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ ‘অতঃপর-শারিয়া কী বলে?’। এছাড়া গ্রন্থকুটির এনেছে মো. জাকির হোসেনের উপন্যাস ‘নীল জোছনায় রূপালী আঁধার’, এশিয়া পাবলিকেশন্স এনেছে ফাতেমা খাতুন মুক্তার উপন্যাস ‘দিগন্ত ছুঁয়েছে নীল আকাশ’, আপন প্রকাশ এনেছে কান্তা কানিজ ফাতিমার কবিতার বই ‘বল্লিবিতান’, অনন্যা এনেছে দীপু মাহামুদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ একজন’, সাহস পাবলিকেশন্স এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, পুথিনিলয় এনেছে ড. মোহাম্মদ আমীনের গবেষণা বিষয়ক বই ‘ছোটোদের বাংলা উচ্চারণ’।

পাঠকের মুখোমুখি তিন তরুণ লেখক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর আয়োজনে পাঠকের মুখোমুখি হয়েছেন তিন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন, আবদুল্লাহ আল ইমরান ও কিঙ্কর আহ্সান।

বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নিজেদের লেখক হয়ে ওঠার গল্পের পাশাপাশি পাঠকের নানা প্রশ্নেরও জবাব দেন তিন তরুণ।

ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের সঞ্চালনায় বৈঠকি ঢঙের এই আড্ডায় প্রথমেই নিজের গল্প শোনান কিঙ্কর আহ্সান।

তিনি বলেন, “মধ্যবিত্ত জীবনের নানা অভিজ্ঞতাই আমার লেখক হওয়ার প্রেরণা। জঙ্গিবাদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে তরুণদের দূরে রাখতে সর্বস্তরে বই ও সৃজনশীল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা দরকার। তাহলেই পৃথিবী একদিন বইয়ের হবে।”

লেখক সাদাত হোসাইন বলেন, “সম্পর্কের সংকট ও সংযোগ নিয়ে দীর্ঘ পরিসরে আমার যে ভাবনা তা উঠে এসেছে আমার সাম্প্রতিক উপন্যাসে। বর্তমান সময়ের তরুণেরা ইউটিউবার, অভিনেতা, এমনকি গানের শিল্পীদের চিনলেও লেখকদের সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। কেননা সমাজে পাঠাভ্যাসহীন একটা বিপুল শ্রেণি গড়ে উঠছে।”

তরুণ উপন্যাসিক আবদুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “এক জীবনের বাইরেও যে আরও অসংখ্য জীবন আছে, তা জানতে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নদী তীরের পাটকল শ্রমিক এলাকায় বেড়ে ওঠায় প্রান্তিক মানুষের জীবন ও গল্প আমাকে টানে। সে সব গল্পই তুলে আনি উপন্যাসে। সর্বশেষ উপন্যাস চন্দ্রলেখায়ও দুই নারীর সংগ্রাম এবং তাদের ঘিরে আরও কিছু জটিল মানুষের গল্প বলেছি।”

অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রীতম চক্রবর্তী এবং সংগঠনের তিন তরুণ লেখক অসিত দেবনাথ অন্তু, তৈমুর রহমান মৃধা ও তানি তামান্না শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। শেষে অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ডাকসুর সদস্য রাকিবুল হাসান ঐহিত্য, মাহমুদুল হাসান ও রাইসা নাসের।

বইমেলার মূলমঞ্চের আয়োজন

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাহিদুল হক, জাফর ওয়াজেদ ও আসলাম সানী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্পদ বডুয়া।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার একুশে বইমেলার একটি স্টলে বইপ্রেমীদের ভিড়।

প্রাবন্ধিক বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পঁচাত্তর-উত্তর সময়ে প্রগতি ও সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে নিজেদের গড়ে তোলা একদল তরুণ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সাহসী হয়ে ওঠেন কবিতা লেখার ভেতর দিয়ে। ঢাকা ও রাজশাহী ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। কয়েকজন তরুণ কবি ও রাজনৈতিক কর্মী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এক্ষেত্রে। শোক থেকে শক্তির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে প্রতিবাদী যে সাহিত্যধারাটি সৃষ্টি হয় এই ধারার সাথে কবি মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীর নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ওই সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করা যেত না তখন তারাই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ উপহার দিয়েছেন যৌথ সম্পাদনায়।”

সভাপতির বক্তব্যে সম্পদ বড়ুয়া বলেন, “জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে কবিরাই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহসী প্রতিবাদ তাই ধ্বনিত হয়েছে কবিদের কলমেই আর সেই প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে রয়েছে এ গ্রন্থটি।”

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে জন্মবার্ষিকীর শুভেচ্ছা

মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকীতে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা তার বাসভবনে গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় একাডেমির পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবারের অনুষ্ঠানসূচি

বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জালাল ফিরোজ রচিত ‘বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ডালেম চন্দ্র বর্মণ, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও সাব্বীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।