মেলায় শিশুদের আগ্রহে বিপিএলের বই

হাস্যরস ও নানা রহস্যে ভরপুর গল্প আর রূপকথার বই ভীষণ পছন্দ রাইয়ানের। বইমেলার শিশু চত্বরে মনের মতো সেই বইয়ের দেখা না পেলে সে চলে আসে বড়দের চত্বরে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2020, 06:22 PM
Updated : 17 Feb 2020, 06:55 PM

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৫৮৮-৮৯ নম্বর স্টল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেডের (বিপিএল) স্টলে এসে সে প্রথমেই তুলে নিল বিএম বরকতউল্লাহের ‘ঘ্যাঙ আর মিয়াঁও’ বইটি।

মালিবাগ থেকে আসা রাইয়ান আনোয়ার বলে, “এই বইটা আমার খুব ভালো লেগেছে। বইয়ের উপরে কী সুন্দর ছবি! আর ভেতরে মজার মজার গল্প। আমি এ বইয়ের গল্পগুলো স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের বলব।”

ঘ্যাঙ আর মিয়াঁও’ বইটি এবারই বইমেলায় এনেছে বিপিএল।

বিপিএল এবার বইমেলায় নতুন বই এনেছে ১০টি।

এবার বইমেলায় বিপিএল থেকে আরও এসেছে বিএম বরকতউল্লাহর ‘খুকী যাবে মেঘের বাড়ি’, আনন্দময়ী মজুমদারের ‘হলদে কুটুম পাখি আর লাল গুবরেপোকা’, মাজহার সরকারের অনুবাদ গ্রন্থ ‘বুড়ি ধাইমার কাপড় সেলাই’,‘জাদুর গাছ’, ফারজানা তান্নীর‘ টিকুর আবিষ্কার’, তন্ময় ইমরানের ‘জোনাকস্নানে জয়তী’, আলী নাঈমের ‘বিজ্ঞানসাধক দুই বন্ধু’, আনন্দময়ী মজুমদারের ‘মা-বেলার ডায়েরি’. হাসান মাহমুদের ‘অতঃপর শারিয়া কী বলে’।

বইমেলায় এসে সৈয়দা রোকাইয়া তনিমা কিনে নিয়েছেন তন্ময় ইমরানের ‘জোনাকস্নানে জয়তী’ বইটি। ফ্রিল্যান্সার সাইকিয়াট্রিস্ট জয়তীর গোয়েন্দা অভিযানের রহস্য রোমাঞ্চ পড়তে তনিমা এই বইটি কিনে নিয়েছেন বলে জানান।

২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশের পর বইমেলায় ৫৯টি নতুন বই এনেছে বলে জানিয়েছেন বিপিএলের একজন প্রতিনিধি।

বিপিএলের বিক্রয় প্রতিনিধি সুজন মাহবুব বলেন, “বইমেলায় আসা নতুন বইগুলোর প্রতি পাঠকের আগ্রহ আছে। কিন্তু বেশকজন পাঠক রয়েছেন, যারা বিপিএলের পুরনো বইগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গতবার মেলায় এসে যে বইটি কিনেছিলেন, এই বইটি এবার তার বন্ধুদের জন্য কিনে নিচ্ছেন।”

পুরনো বইগুলোর মধ্যে আরিফুল ইসলাম রনির ‘কথায় আড্ডায় মাশরাফি’, মুস্তাফিজ মামুনের ‘বনে বেড়াই’, খলীকুজ্জামান ইলিয়াসের অনুবাদ গ্রন্থ ‘গোল্ডেন বাউ’, সারাহ বেগম কবরীর ‘স্মৃতিটুকু থাক’,  অন্বেষা মমতাজের ‘দ্য টার্ন অফ দ্য স্ক্রু’ বইগুলো চাহিদা রয়েছে বলে জানান সুজন।

বিপিএলের স্টলে বই কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা সারোয়ার আলম বলেন, “নবীন প্রকাশনী হিসেবে বিপিএলের বইয়ের মান অন্য অনেক প্রকাশনী থেকে বেশ উন্নত। অনুবাদ গ্রন্থগুলো আমি পড়েছি। এবার এলাম নতুন বই কি এসেছে, সেগুলো কিনে নিতে।”

বইমেলার সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “বইয়ের মানের কথা যদি বলি, তবে বইয়ের সার্বিক দিক কিন্তু অনেক উন্নত হয়েছে। হয়ত লেখার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। প্রথম দিকে বেশকিছু বই এসেছিল, ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তবে মেলার মধ্যভাগে এসে যে ধরনের বই এসেছে, তা বেশ মানসম্পন্ন। গতবার বাংলা একাডেমি ৮০০’র বেশি কিছু বইকে মানসম্পন্ন বলেছিল। আশা করছি, এ সংখ্যাটি এবার হাজার ছাড়াবে।”

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার একুশে বইমেলার একটি স্টলে বইপ্রেমীদের ভিড়।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি বলেন, “বইমেলার প্রথম ভাগে পাঠক তাদের পছন্দের বইগুলোর তালিকা করে নিয়ে গেছিলেন। এখন তারা সেসব বই কিনে নিচ্ছেন। ফিকশনের প্রতি আগ্রহ তো সবসময় বেশি। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবার তরুণদের মধ্যে বেশ আগ্রহ দেখলাম।”

রুম্পার ‘শর্বরীশ্লোক’

গ্রন্থমেলায় এসেছে রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানের কাব্যগ্রন্থ ‘শর্বরীশ্লোক’।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানের লেখা কবিতাগুলো বিশেস করে রাতেই লেখা বলে সংকলণটির নাম রাখা হয়েছে শর্বরীশ্লোক।

বর্ষা দুপুর থেকে প্রকাশিত এই সংকলণে আছে ৩০টি কবিতা। লেখক রুম্পা পেশায় সাংবাদিক হলেও মনের আনন্দে লিখে যাচ্ছেন কবিতা অনেক আগে থেকেই।

নিজের লেখা সম্বন্ধে রুম্পা বলেন, “আমি লিখি মনের মাঝের ইট চাপা ধূসর গাছের জন্য একটু অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিতে। হয়তো যা নিত্য দিনে বলা যায় না, হয়তো তা রাতের অন্ধকারে মন থেকে ঝেড়ে ফেলা যায়। শর্বরীশ্লোক তাই শুধু একটি সংকলন নয়। এই বইটি আবেগের মিশ্রণ।”

২০১১ সাল থেকে নিয়মিত লিখছেন রুম্পা। তার প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘সত্যি তবু কাল্পনিক’। তিনি শিশুদের জন্য নিয়মিত লিখছেন। এবার সিসিমপুরের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে তার লেখা বাচ্চাদের একটি বই ‘কাঠির কেরামতি’।

গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে বইমেলায় এসেছে পুলিশ কর্মকর্তা আযীমুল হকের 'ডুবে যেতে যেতে' কাব্যগ্রন্থটি। রমনা জোনের এডিসি আযীমুল হকের প্রথম কাব্যগ্রন্থটিতে রয়েছে ৪১টি কবিতা। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। সোমবার বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

গ্রন্থমেলার ১৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৩৫টি।

এদিন বিকালে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত‘ ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন  এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়েছে বাঙালির হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ সমগ্র বিশ্বের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দেয় তা হল- কোনো জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে অস্ত্র দিয়ে দমন করা যায় না। আমরা বলতে পারি ৭ই মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণই বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি নির্মাণ করেছে।”