সোমবার বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ বলেন, “সংসদের সাথে আমার সম্পর্ক মনের ও প্রাণের। প্রায়ই মনটা চায় সংসদে গিয়ে সংসদের কার্যক্রম দেখি এবং আপনাদের (সংসদ সদস্য) সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও গল্প গুজব করে সময় কাটাই।
“কিন্তু জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ইচ্ছা থাকলেও উপায় থাকে না। তবে সংসদে না গেলেও আমি টেলিভিশনে নিয়মিত সংসদ কার্যক্রম দেখি।”
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সংসদ সদস্যদের সম্মানে বঙ্গভবনে দেওয়া এক নৈশভোজে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।
সংসদের সংসদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আপনারা হচ্ছেন ভোটার। আপনাদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তাই আপনাদের সাথে মাঝে মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া আমার জন্য খুবই আনন্দের। আপনারা জানেন ১৯৭২ সালে লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি দিয়ে সংসদে আমার পথচলা শুরু এবং ২০১৩ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি তা শেষ হয়।”
দরবার হলের ওই অনুষ্ঠানে দেশের আইন প্রণেতাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। জনগণ অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনাদেরকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তাই আপনাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাপূরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।
“বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া-পাওয়া খুবই সীমিত। অল্পতেই তারা খুশি হন। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা থাকে প্রয়োজনের সময় তারা যেন তাকে কাছে পায়। তাই আপনারা নির্বাচনী এলাকার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন এবং জনগণের প্রয়োজনের সময়তাদের পাশে দাঁড়াবেন। এতে দল ও সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ক ও যোগাযোগ মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।”
সংসদের বিরোধী দলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বিরোধী দল সংসদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিরোধী দলের গঠনমূলক সমালোচনা ও ভূমিকা সংসদকে কার্যকর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ও বিগত সংসদে সরকারি ও বিরোধীদল সংসদকে কার্যকর করতে যে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। আমি আশা করি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
“সংসদ হয়ে উঠবে সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে একই সাথে। সংসদকে আরো কার্যকর করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন। জনগণের চাওয়া পাওয়া ও আশা আকাঙ্ক্ষা সংসদে যথাযথভাবে তুলে ধরবেন।”
সংসদ সদস্যদের জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সংসদ সদস্যবৃন্দ, আমি আশা করি আপনারাও জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সংসদকে ভালোবাসবেন এবং সংসদকে আরো কার্যকর করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবেন। জনগণের চাওয়া পাওয়া ও আশা আকাঙ্ক্ষা সংসদে যথাযথভাবে তুলে ধরবেন।”
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীসহ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নৈশভোজের আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে একান্তে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালি সফরের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন এং এসব সফরের ফলাফল বিষয়ে অবহিত করেন।
শেখ হাসিনা সফর সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রেসসচিব বলেন, সংসদের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা বিষয়েরও প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।