মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে আবরারের বাবার আবেদন

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যামামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2020, 01:49 PM
Updated : 17 Feb 2020, 02:08 PM

সোমবার এই আবেদন ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেন আববারের বাবা ও মামলার বাদী বরকতউল্লাহ।

আবেদন জমা দেওয়ার সময় আবরারের বাবার সঙ্গে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু, আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ তার স্বজনরা ছিলেন।

আবু আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবেদনটি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যাবে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-২ শাখায় যাবে এই আবেদনটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে পদক্ষেপ নেবে আইন মন্ত্রণালয়।

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যে কোনো মামলা ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৪৫ দিন সময় নিতে পারে আদালত।

গত বছরের অক্টোবরে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে ৫ সপ্তাহে বুয়েট ছাত্রলীগের ২৫ নেতা-কর্মীকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।

আবরার ফাহাদ

তখনই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুতবিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, “এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন আসতে হয়, আবেদন আসলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলা (নিষ্পত্তি) করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং দ্রুততার সাথে করার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ বিচারকার্য করব।”

আবরারের বাবা আবেদনে বলেন, “মামলাটির বিচারকার্য বিলম্বিত হলে সাক্ষীদের বৈরিতাসহ মামলায় ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে আমি আশাবাদী।”

বরকতউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আশা করছি, দ্রুততার ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার হবে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।”

দ্রুত এই বিচার শুরুর আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও।

বিকালে আবরারের বাবার আবেদন দাখিলের আগে সোমবার সকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল।

তখন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ আদালতে বলেন, “মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য আমরা আবেদন করব। তাই সময় চাচ্ছি।”

তখন বিচারক অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ১৮ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেন।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে পিটুনিতে মারা যান আবরার। পরদিন বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষোভ-বিক্ষোভে বুয়েট অচল হয়ে পড়ার পর দ্রুত তদন্ত শেষ করে ১৩ ন‌ভেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গো‌য়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনের প‌রিদর্শক মো. ওয়া‌হিদুজ্জামান।

আবরার হত্যামামলার আসামিরা

এই ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জন।

তদন্ত চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আরেকজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

আসামিদের মধ্যে পলাতক আছেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ নামে তিনজন। এর ম‌ধ্যে মোস্তবা রা‌ফিদের নাম এজাহা‌রে ছিল না। তাদের আত্মসমর্পণ করতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে।

এরপরও তারা হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।