বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বইমেলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত নানা উপস্থাপনায় সাজানো হয়েছে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নজরুল মঞ্চ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2020, 04:24 PM
Updated : 16 Feb 2020, 04:25 PM

‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু।

তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা দিতে বইমেলা উদ্বোধনের দিন থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য এটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে বলে ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুরুতে আমরা শুধু শুক্র-শনিবার এবং বিশেষ দিনগুলোতে এই আয়োজন সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু এখন দর্শনার্থীদের জন্য এটি নিয়মিত রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিয়মিত ভিড়ই  প্রমাণ করেছে ডাকসুর এই আয়োজন এবারের বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“এর মাধ্যমে আমরা রক্তের দামে কেনা এই বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দর্শনার্থীদের আমরা বার্তা দিতে চেয়েছি যে, বঙ্গবন্ধু শুধু রেডিও বা বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই নয়, বাঙালির সমগ্র স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।”

সাদ জানান, বাহান্ন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ছবি, বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা, ওই সময়কার বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ, বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ সাজানো হয়েছে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন লেখকের প্রায় ৬০টি বই প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে।

রোববার নজরুল মঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ছবির সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ কেউ বন্ধুদের সাথে নিয়ে সেলফিও তুলছেন।

আবদুর রহমান নামে একজন দর্শনার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আজ প্রথম ঢুকলাম। ঢুকেই নজরুল মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর এই চিত্র প্রদর্শনী নজরে পড়ল। এরপর পুরোটা ঘুরে দেখলাম। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডাকসুর এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি বলেন, “তরুণ বয়স থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি মুগ্ধ। যদিও কখনও বঙ্গবন্ধুকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি। তবে স্বাধীনতার আগে থেকেই রেডিওতে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ-বক্তৃতাগুলো শুনেছি। এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকে এখন অনেকের কাছে বিষয়গুলো অজানা। সেই জায়গা থেকে আমি বলব, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জ্ঞান রাখা প্রত্যেক বাঙালির দায়িত্ব।”

বইমেলায় এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ডাকসুর একটি স্টলও (স্টল নম্বর ১০৪) রাখা হয়েছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ডাকসু থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ডাকসু সাহিত্য পত্রিকা, নববর্ষের বিশেষ পত্রিকা ‘বছর ত্রিশেক পরে’, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ‘শ্রাবণের মেঘ’। এছাড়া টিএসসিভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন প্রকাশনাও পাওয়া যাচ্ছে।

নতুন বই

রোববার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। এর মধ্যে সময় প্রকাশন এনেছে জোহরা শেলীর উপন্যাস মারজানা, অনন্যা এনেছে ইবরাহিম ওবায়েদ রচিত উপন্যাস অন্ধকার দিন, প্রকৃতি প্রকাশনী এনেছে তাহের আফরোজের উপন্যাস সুরের আগুন, কাব্যগ্রন্থ প্রকাশন এনেছে রিহানা রিয়া সরকার রচিত কবিতাগ্রন্থ তুমি এসো, চন্দ্রবিন্দু এনেছে সাবিয়া ইসলাম জ্যোতীর্থ রচিত কবিতার বই বিষন্ন ঈশ্বর, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মিনার মনসুরের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু-মিত্র , নন্দিতা প্রকাশ এনেছে সুদেব কুমার বিশ্বাসের ছোট গল্প ফিরে দেখা, র‌্যামন পাবলিকেশন্স এনেছে আবুল খায়ের রচিত গবেষণা গ্রন্থ বাংলাদেশ গণপরিষদের কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক তথ্য।

মূলমঞ্চের আয়োজন

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় পিয়াস মজিদ রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি শিহাব সরকার ও গবেষক ইসরাইল খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলা একাডেমি বইয়ে মুদ্রিত শিরোনামের তিনটি শব্দ অবিচ্ছেদ্য। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়। এই অধ্যায়ের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু, আর বাংলা একাডেমি মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিভূমি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার ভ্রুণকেন্দ্র।”

তিনি বলেন, “ষাটের দশক থেকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র ছিল বাংলা একাডেমি। সেদিনের বাংলা একাডেমি তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের জাতীয়তাবাদী মানসের ধারা বিকশিত করতে পেরেছিল। একাডেমির সেই ইতিহাস এই বইয়ের মধ্য দিয়ে আরও উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে।”

বইয়ের লেখক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমির পারস্পরিক যোগসূত্র অন্বেষার প্রেরণা থেকেই এ গ্রন্থের সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি বিষয়ে এ গ্রন্থটি রচনা করতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি।”

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, “পিয়াস মজিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি গ্রন্থটি মূলত বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক চেতনাকে ধারণ করেই রচিত। সাংস্কৃতিক চেতনা দিয়েও যে সংগ্রাম করা যায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। ভাষা আন্দোলনের পর থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির দীর্ঘ অভিযাত্রার ইতিহাস ও অর্জন নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ গ্রন্থ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।”

সোমবারের অনুষ্ঠান সূচি

সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষোড়শ দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ‘৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ: বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন এ কে এম শাহনাওয়াজ ও কুতুব আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।