ভোটের দূষণমুক্ত প্রচারে পরীক্ষামূলক উদ্যোগ ইসির

পরিবেশ দূষণ ও শব্দ দূষণে জনদুর্ভোগ কমাতে প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2020, 02:59 PM
Updated : 14 Feb 2020, 03:19 PM

ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ কাজ করতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরিবেশ দূষণ ঘটিয়ে প্রচার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ইসি।

সিটি ভোটে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে চলে জমজমাট প্রচার। এরমধ্যে লেমিনেটেড পোস্টারের নেতিবাচক প্রভাব এবং অসহনীয় মাইকিং নিয়ে সমালোচনা ওঠে। সদলবলে প্রার্থীদের গণসংযোগে সড়ক আটকে গিয়ে জনভোগান্তিও ঘটে।

এরইমধ্যে লেমিনেটেড পোস্টার বন্ধে আদালত আদেশ দিয়েছে। বিদ্যমান আচরণবিধিতে পোস্টার ব্যবহার ও ছয় ঘণ্টার জন্য মাইকিংয়ের বিধানও রয়েছে।

এবার আচরণবিধি সংশোধন করা না হলেও আলোচনার মধ্যদিয়ে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে একটা পাইলটিং করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। ২৯ মার্চ এই উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে, তার আগে কয়েক সপ্তাহ থাকবে প্রচারের জন্য।

নতুন উদ্যোগের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আচরণবিধি এ মুহুর্তে পরিবর্তন সম্ভব না।

“তবে কমিশন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা প্রার্থী থাকবেন, তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।… বিধির মধ্যে থেকে আলোচনা করে একটা পাইলট করার ইচ্ছে রয়েছে কমিশনের। সবাই যদি সম্মত থাকেন- যেন পোস্টার ব্যবহার করা না হয়, মাইক ব্যবহার না হয়।”

কেন এ উদ্যোগ

নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে বর্তমানে যে প্লাস্টিকের লেমিনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। কেবল কাগজের তৈরি পোস্টারও যদি ড্রেনে যায়, তাহলে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে।

“ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পোস্টারগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। কেননা, এগুলো পোড়ালে পরিবেশ দূষণ হবে। মাটিতে ফেললেও পরিবেশ দূষণ হবে। তাই পোস্টার ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। বিকল্প কী পদ্ধতিতে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া যাবে, তা নিতে ভাবতে হবে।”

নির্বাচনে দিনভর মাইক ব্যবহারের আইনি অনুমতি থাকলেও বাস্তবে যেভাবে লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হয়, তাতে দুপুর ২টা থেকে ৮টার সময়সীমা কেউ মানে না। তাছাড়া একাধিক স্পিকার ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রায়। ফলে ব্যাপক শব্দ দূষণের সৃষ্টি হয়।

পুরান ঢাকায় দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী গণসংযোগে নেতাকর্মীদের ঢল। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারের নামে মিছিল, মহড়ার করে ফেলেন অনেকে। যদিও এটা আইন বৈধতা নেই। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

তিনি বলেন, “আমরা তিনটি বিষয়কে মাথায় রেখেছি। আর তা হলো- পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ ও যানজটমুক্ত নির্বাচনী প্রচার।”

বিকল্প কী

ইসি সচিব আলমগীর বলেন, “কমিশন থেকেও বিকল্প প্রস্তাব থাকবে। প্রার্থীদেরও কিছু প্রস্তাব থাকতে পারে। পথসভা করা যেতে পরে। জনসভাও করা যেতে পারে। পরিচিতি অন্যভাবে করা যেতে পারে। বাড়ি বাড়ি তো যেতেই পারে।”

বিদ্যমান আচরণবিধিতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়ে কোনো বিধি নিষেধ নেই। এ অবস্থায় এ ধরনের প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত রেখে নির্বাচনী ব্যয়ে যুক্ত করা হতে পারে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

সচিব বলেন, “ডিজিটাল প্রচারণা করা যাবে। টেলিভিশন, ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করা যাবে।”

১০ বছর আগে প্রার্থীদের প্রচারণা কমিশনের উদ্যোগে করার লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাবও উঠেছিল। এখন একই আদলে প্রার্থীদেরকে ভোটারের মুখোমুখি করাতে সংলাপের বিষয়টিও বিকল্প প্রস্তাবে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।