সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ‘ঢাবি-বুয়েটও রাজি’

এ বছর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2020, 10:33 AM
Updated : 24 Feb 2020, 05:39 PM

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বুধবার কমিশনে এক সভায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ইউজিসি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহর বলেন, “আমরা আশা করছি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। ইউজিসি এ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষা, পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় যথাসময়ে জানানো হবে।

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির উদ্যোগের এই ব্যবস্থার বিপরীতে অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডাকসু সভাপতি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠত কার‌্যনির্বাহী সভায় নিজস্ব পরীক্ষার  মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখার সুপারিশ করা হয়। 

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বুয়েটও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি এতদিন।

দুইদিন পর ইউজিসি চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা  করেন।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে গোটা জাতির ‘আকাঙ্ক্ষা’ অপূর্ণ থাকতে পারে না। কারও ইগো যেন অন্যদের প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে,” বলেন তিনি।

এরপর মঙ্গলবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৬২তম সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একমত হন উপাচার্যর। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের উপাচার্য ওই সভায় ছিলেন না।

তবে বুধবার ইউজিসির সভার পর এই দুই প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তহীনতাও দূর হল।

বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির আলোকে প্রণীত পৃথক প্রশ্নপত্রে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির জন্যও এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হবে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।

এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার, যাকে বলা হচ্ছে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আয়োজন করেও শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করে।

সরকারের গত মেয়াদে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতবছর আবারও বিষয়টি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন এবং ২০২০ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

দীপু মনির যুক্তি, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর অর্থের অপচয় কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আরও প্রশস্ত হবে। কারণ এখন ইচ্ছা থাকলেও সব জায়গায় পরীক্ষা দেওয়া তাদের সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।