তিনি বলেছেন, “সোশাল মিডিয়ায় অনেক ধরনের রিউমার হচ্ছে। অনেক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। এ রোগের আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও পর্যন্ত বের হয়নি। এ কারণে এ ধরনের প্রচার প্রচারণায় মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, আতঙ্কিত না হয়।”
ঢাকার মহাখালীতে আইইডিসিআরে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক ফ্লোরা।
চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এরপর এ পর্যন্ত অন্তত ৪৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছড়িয়েছে ২৪ হাজার।
নভেল করোনাভাইরাস সাধারণ ফ্লুর মত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশে ৪৩ জনকে পরীক্ষা করে কারও শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
এ ধরনের ক্ষেত্রে আইইডিসিআর পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষা করে নিশ্চিত হচ্ছে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ওই নমুনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠানো হচ্ছে পুনঃপরীক্ষার জন্য।
বাংলাদেশে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কেবল আইইডিসিআরেই আছে। সে কারণে কারও মধ্যে সংক্রমণের সন্দেহ দেখা গেলে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চীনের উহানফেরত ৩১২ জনের মধ্যে যাদের আশকোনা হজক্যাম্পে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যদেরসহ তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
“সিএমএইচে আগে আরও তিনটি পরিবারকে রাখা হয়েছিল। সেখানে কেউ অসুস্থ্য নন। যে শিশুটির জ্বর এসেছে তার ক্ষেত্রেও আমরা করোনাভাইরাস বলে সন্দেহ করছি না। যেহেতু আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি সেজন্য বেটার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে আমরা সেখানে পাঠিয়েছি।… ওই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল এখনও পাওয়া যায়নি।”
অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, সিএমএইচে এখন উহানফেরত ১১ জন আছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছেন ৩ জন। বাকি ২৯৮ জন আছেন আশকোনায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে সাধারণ সর্দিকাশির চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য কোনো রোগ থাকলে পাশপাশি সেটার চিকিৎসাও চলে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দরগুলোতেও বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা ৭ হাজার ২৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।
ফ্লোরা বলেন, “চীন থেকে যদি কেউ অন্য দেশ হয়ে বাংলাদেশে আসে আমরা তাদের পরীক্ষা করছি। কিন্তু রোগটি অন্য দেশে এখনও ছড়ায়নি বলে আমরা সবাইকে স্ক্রিনিং করছি না। তবে ভারত যদি এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তাহলে ভারত থেকে আসা যাত্রীদেরও স্ক্রিনিং করা হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”
বাংলাদেশে অবস্থানকারী চীনা নাগরিকদের ব্যাপারে আইইডিসিআর অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে চায়। এ কারণে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান পরিচালক।
তিনি বলেন, “যেহেতু তারা অন্য দেশের নাগরিক, সে কারণে তারা কোথায় থাকেন জানতে পারলে আমরা সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য নিতে পারব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।