এত কম ভোট দেখে অবাক হননি মাহবুব তালুকদার

ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটের হার দেখে সরকারি দলও যখন ভাবনায়, তখন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বললেন, অস্বাভাবিক কম ভোট তাকে মোটেই অবাক করেনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2020, 11:30 AM
Updated : 4 Feb 2020, 01:06 PM

“ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অস্বাভাবিক কম ভোট পড়া আমার কাছে স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত হতে পারে, কিন্তু এটাই বাস্তবচিত্র,” বলেছেন তিনি।

রা্জধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে ভোটগ্রহণের দুদিনপর মঙ্গলবার নিজের কার্যালয়ে ‘আমার কথা’য় একথা বলেন মাহবুব তালুকদার।

ইসিতে সহকর্মীদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের জন্য আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার ঢাকার নির্বাচন পর্যালোচনা করে তার মূল্যায়ন বরাবরের মতোই লিখিতভাবে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

তিন সপ্তাহের সরগরম প্রচারণার পর গত শনিবার ইভিএমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটের হার ছিল ২৫ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটের হার ছিল ২৯ শতাংশ।

সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, তারা ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করলেও প্রার্থী তথা দলগুলো মানুষকে আনতে পারেনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি নানা কথায় আতঙ্ক ছড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে। বিপরীতে বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতিই মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

মাহবুব তালুকদারও মনে করেন, মানুষ এখন ভোট নিয়ে নিরাসক্ত।

“জনগণ নির্বাচন বা ভোটের প্রতি নিরাসক্ত হলে নানা প্রকার ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা দিয়ে এই বাস্তব অবস্থার চিত্রটি খণ্ডন করা যাবে না।।”

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটকেন্দ্রে বিরোধী পক্ষের দৃশ্যমান অনুপস্থিতি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এর আগে উপজেলা নির্বাচনের সময় এবং ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটির ভোটের আগেও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কারের সুপারিশ করেছিলেন তিনি।

ঢাকা সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তাতে আচরণবিধি রাখা না-রাখা সমান।

মাহবুব তালুকদার মনে করেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।

‘গণতন্ত্র যেন বন্দি না হয়’

ভোটের প্রতি জনগণের নিরাসক্তি গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি বলে মনে করছেন সাবেক আমলা মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কী? এই প্রশ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

“নির্বাচনবিমুখতা গণতন্ত্রহীনতার নামান্তর। এই নির্বাচনে ভোটের প্রতি জনগণের অনীহা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, জাতি কি ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রয়োজন-কোনো কোনো বিজ্ঞজন এমন বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু গণতন্ত্র আপন মহিমায় বিকশিত ও উদ্ভাসিত হতে পারে, যদি অবাঞ্ছিত উপায়ে তাকে বন্দি করা না হয়।”

মাহবুব তালুকদারের শঙ্কা, বিভিন্ন সময়ে অসাংবিধানিক শাসনের কবলে পড়া বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে ফের সঙ্কট আসতে পারে।

“ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাভাবিক পথ যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, সেই অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয় “

এই পরিস্থিতিতে ‘ক্রান্তিলগ্ন’ আখ্যায়িত করে সব রাজনৈতিক দলকে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ দেন তিনি।

“তা না হলে অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে পা বাড়াবে বাংলাদেশ,” এই সতর্কবার্তাও আসে তার কাছ থেকে।