রাজীবের মৃত্যু: অভিযোগপত্র নিয়ে জানাজানি দেড় মাস পর, পরিবারের ক্ষোভ

দুই বাসের রেষারেষিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা হওয়ার প্রায় দেড় মাস পর বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2020, 11:13 AM
Updated : 2 Feb 2020, 12:15 PM

বাদীপক্ষকে না জানিয়ে পুলিশ অভিযোগপত্র দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজীবের পরিবার। তাছাড়া অভিযোগপত্রে যুক্ত করা আইনের ধারা নিয়েও আপত্তি তাদের।

এ অবস্থায় অভিযোগপত্রের বিষয়ে না-রাজি আবেদন করার কথা জানিয়েছেন রাজীবের খালা জাহানারা বেগম (অভিযোগপত্রের পাঁচ নম্বর সাক্ষী)।  

অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি মন্তব্য করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কর্মী জাহানারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। 

“এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আমাদের না-রাজি দেয়ার ইচ্ছে আছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই মো. ইদ্রিস আলী ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত ২২ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র জমা দিলেও বিষয়টি রোববার জানা যায়। এদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের তারিখ ছিল।

আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন ফকির বলেন, অভিযোগপত্রে দুই চালকের লাইসেন্স সঠিক রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় আর সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে।

আসামিরা হলেন- বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন পরিবহনের বাসচালক মো. খোরশেদ। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।

২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছলে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটি ঘেঁষে অতিক্রম করে। এ সময় দুই বাসের চাপে রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত লাগে।

দুর্ঘটনার পর তাকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ এপ্রিল মারা যান তিনি।

মৃত্যুর আগে ৩ এপ্রিল রাজীব শাহবাগ থানায় পেনাল কোডের ২৭৯/৩৩৮-এর ‘ক’ ধারায় মামলা করেন। ২৭৯ ধারায় সর্বোচ্চ তিন বছর ও ৩৩৮ ধারায় সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মহানগর পুলিশের অপরাধ, তদন্ত ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা যায়, মামলার তদন্তের সময় তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে ৩৩৮ ধারা বাদ দিয়ে মামলায় ৩০৪ (খ) ধারা যুক্ত করা হয়।

এ ধারায় অপরাধের তুলনায় লঘু সাজা হবে বলে সে সময় তদন্ত কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনজীবীরা। তারা বরং ৩০৪ ধারা কিংবা ৩০৪(ক) ধারা যুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। 

৩০৪ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি খুন নয় এমন অপরাধজনক প্রাণহানি করে, তাহলে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে কিংবা ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তাকে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা যাবে। যদি সে কাজটি দ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয়, সেই কাজটি মৃত্যু সংঘটনের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয় অথবা এমন দৈহিক জখম করার উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়, সে দৈহিক জখমের ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে।”

৩০৪ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি বেপোরায়ভাবে বা অবহেলাজনকভাবে কার্য করে কারও মৃত্যু ঘটায় এবং তা শাস্তিযোগ্য নরহত্যা না হয়, তবে সে ব্যক্তি পাঁচ বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।”

আর ৩০৪ (খ) এর শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম বলেন, একই রকমের দুর্ঘটনায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব-দিয়ার মৃত্যুর মামলায় পরাধজনক প্রাণনাশের ধারা এসেছিল।

তিনি বলেন, “ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে আসামিরা ঘটিয়েছিল। গাড়িচালকরা জানত যে দুই বাসের প্রতিযোগিতায়, রেষারেষিতে মারাত্মক দুঘর্টনা ঘটতে পারে, কারো প্রাণ যেতে পারে। তাই এত স্বল্পমাত্রার শাস্তির ধারা যুক্ত করে, অভিযোপত্রে অবহেলা উল্লেখ করে তদন্ত কমর্কর্তা তদন্তে নিজেই অবহেলা করেছেন।

“তদন্ত কতৃর্পক্ষ এটিতে অপরাধজনক নরহত্যার ধারা যুক্ত করবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছিল। সব সাংবাদিকদেরও পুলিশ এটা বলেছিল। তবে এর বিপরীত হল কেন? আমরা যাবজ্জীবন শাস্তির ধারা যুক্ত হোক এটি চাই।”