আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ভোটারের বিড়ম্বনা

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে; স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2020, 09:16 AM
Updated : 1 Feb 2020, 09:32 PM

আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পরে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহায়তায় ভোট দেন তিনি।

লালবাগ ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভোটার আছিয়া বেগম অভিযোগ করেন, তাকে ভোট দিতে দিচ্ছেন না নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার ফজলে হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। উনাকে একটু পরে আসতে বলেছি। কারণ সকালে ঠাণ্ডায় অনেক সময় এরকম হয়ে থাকে। উনি ভোট দিতে পারবেন।”

সকালে উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান সিইসি কে এম নূরুল হুদা। দুবার যাচাই করেও আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোটার নম্বর ব্যবহার করা হয়। এসময় সিইসিকে নিজের স্মার্ট কার্ডও বের করতে দেখা যায়।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু তালেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগে আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে হয়। সিইসি মহোদয় আঙ্গুলের ছাপ দু-তিন বার ট্রাই করেন। পরে ভোটার শণাক্তকরণ করে ইভিএম ভোট দেন।

“অনেকেরই এরকম মেলে না। যে অ্যাঙ্গেল থেকে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয়, তা সঠিক না হওয়ায় মেলে না।”

বার বার চেষ্টার পরেও মিলছিল না কামাল হোসেনের আঙ্গুলের ছাপ।

এবিষয়ে সিইসির একান্ত সচিব এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকবার দিলে হয়ত ছাপ মিলত। সময়ক্ষেপণ না করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করেছেন।

“প্রথমবার না মেলায় জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার পরিচয় তথ্য মনিটরিংয়ে আসে। এরপরই আঙ্গুলের আঙ্গুলের ছাপ মিলেছে এবং ভোটার অথিন্টিকেশন করা হয়। এরপরই ইভিএমে ভোট দেন স্যার।”

রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন কয়েকবার চেষ্টার পরেও আঙ্গুলের ছাপ মিলেনি। প্রতিবার আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পর মেশিনের স্ক্রিনে লাল রঙে ভাসছিল ‘আবার চেষ্টা করুন’।

এসময় কামাল হোসেনকে একটু রাগান্বিত দেখাচ্ছিল। কোনোভাবেই কামালের আঙ্গুল ইভিএম মেশিন শনাক্ত করতে না পারায় নিজের পিন নম্বর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।

সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কাউসার-ই-জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কারো আঙ্গুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এরকম এক শতাংশ ভোটারের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

“উনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় আমার পিন নম্বর এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করি। পরে কম্পিউটারের মনিটরে উনার যাবতীয় তথ্য ভেসে উঠে, সেটা সবাই দেখেছেন। এজেন্টরা উনাকে শনাক্ত করার পর তার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।”

ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, “৩-৪টি উপায় আছে। আইডি কার্ড দেখতে পারে, পুরনো কার্ড দেখতে পারে। নম্বর মেলালে ছবি আসবে, ভোট দিতে পারবে।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারেকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না এমন ভোটারের সংখ্যা ১ শতাংশের বেশি হওয়ায় নতুন করে আরো কয়েক শতাংশ বাড়ানোর জন্য বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেছেন।

“আবেদন অনুযায়ী শতাংশের হার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়।”

সকালে গুলশানের মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে এসে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়ালকে ‘আধা ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে’ হয়েছে।

এ কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফারজানা শারমিন বলেন, “প্যানেলে কানেকশন লুজ ছিল, দু-তিন দফায় চেষ্টা করেছি। পরে আমরা প্যানেল চেঞ্জ করে দিয়েছি। নাসরিন আউয়াল পরে ভোট দিয়েছেন।”

বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জয়নাল আবেদিন বলেন, “সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণের পর একটি বুথে আমরা প্রবলেম দেখা দিয়েছিল। 

“একটা বুথে একটু সমস্যা হচ্ছিল। ব্যালট প্যানেলের সাথে কন্ট্রোল প্যানেলের সংযোগ পাচ্ছিল না। দুটা ভোট দেওয়ার পরে ব্যালট প্যানেল ডিসকানেক্ট দেখাচ্ছিল। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা সমস্যা সমাধান করে ফেলেছি।”

সহজ হলেও সিলমারার আগের মজা নাই

ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর নগরের ভোটাররা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের কেউ বলেছেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া আসলে সোজা। আবার কেউ অভিযোগ করেছেন, ইভিএম যন্ত্রের কারিগরি ত্রুটিও দেখা দিয়েছে।

সকালে গুলশানের মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে এসে আলিম উদ্দিন বলেন, “আমি এই ইভিএম নিয়ে কিছু জানতাম না। ভোটকেন্দ্রে আসার পরে আমাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে ভোট দিতে হবে। পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সবুজ বোতাম টিপে ভোট দিলাম। কোনো জটিলতা হয়নি।”

বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে হোসনে আরা বলেন, “ইভিএমে ভোট হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এবার ভোট আসলে আরও সুন্দর হইসে। ভোটকেন্দ্রের যাওয়ার আগে দেইখ্যা গেছিলাম, কেমনে ভোট দিতে হয়। ইভিএমে ভোট দেওয়া তো সোজা। খালি টেনশন করসি।”

আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে ভোটার মিনু রহমান বলেন, “ইভিএম এ ভোট দেওয়া অনেক সহজ।”

হাজারীবাগ এলাকার সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, “বিষয়টি বুঝতে সময় লেগেছে তবে ব্যালটে সিল মারার মজাটা নেই“।

রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দিদারুল আলম বলেন, “ইভিএমে প্রথম ভোট দিলাম। আসলে আমার ভোটাধিকার প্রয়োগের তাগিদে আমি সকাল সকাল এসে ভোট দিয়ে দিয়েছি। আমার কোনো সমস্যা হয়নি।”