এক নজরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি ভোট

যানজট, জলজট, ধুলি-দূষণের ঢাকা মহানগরে পাঁচ বছর পর মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে চলেছেন নগরবাসী, এমন এক সময়ে এই ভোট হচ্ছে যখন প্রাণঘাতী ডেঙ্গু রোগের দুঃসহ অভিজ্ঞতার ছয় মাসও পার হয়নি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2020, 02:01 PM
Updated : 31 Jan 2020, 06:17 PM

মশাবাহিত এই রোগে এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক, যা গত দুই দশকে মোট আক্রান্তের চেয়ে বেশি। সরকারি হিসাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ, যদি সারা দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে আরও অনেকের  মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকার রেসিডিন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম সরঞ্জাম বিতরণ পরিদর্শনে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের বছর পেরিয়ে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একজন নতুন এসেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকনকে রেখে এবার মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, যিনি ভবিষ্যৎ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রাজধানীকেও সেইভাবে সাজাতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

এই সিটি করপোরেশনে পরিবর্তন এসেছে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থীর ক্ষেত্রে। পাঁচ বছর আগে ভোটের দিন মাঝপথে নির্বাচন বর্জন করে পরাজিত মির্জা আব্বাসের জায়গায় এবার প্রার্থী করা হয়েছে তরুণ ইশরাক হোসেনকে। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন।

এই সিটি করপোরেশন আলোচিত মেয়র প্রার্থী আছেন আরেকজন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন।

 

পাঁচ বছর আগের ভোটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত পোশাক ব্যবসায়ী আনিসুল হক। এবার সেখানে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলামও পোশাক ব্যবসায়ী। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর গত বছর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে নয় মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করা আতিক এবারই প্রথম সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোটে লড়ছেন।

এই সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পাঁচ বছর আগের ওই নির্বাচনেও লড়েছিলেন। সেবার ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া তাবিথ এবার শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। মেয়র নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি রোধ করে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে লড়ছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল। পেশায় দন্ত্যচিকিৎসক রুবেল মেয়র নির্বাচিত হলে অনিয়ম-দুর্নীতি দমন করে সিটি করপোরেশন ভবন থেকে ‘পর্দা সরিয়ে’ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। এতদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়ররা যেসব জায়গায় ব্যর্থ হয়েছেন, সেগুলো তুলে ধরে তাকে একবার ওই চেয়ারে বসিয়ে পরীক্ষা নিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।   

 

এই দুই সিটি করপোরেশনে দুইজন মেয়র এবং ১৭২ জন (সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে) কাউন্সিলর বেছে নিতে শনিবার ভোট দেবেন প্রায় অর্ধকোটি ভোটার।

দুই  সিটি করপোরেশনে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষে সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

প্রথমবারের মতো দুই সিটিতেই একযোগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে শহরজুড়ে মটরবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগের দিন ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় জরিমানা গুণতে হয়ে এ চালককে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

দুই সিটি করপোরেশনের ভোটার রয়েছেন ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন, প্রার্থী রয়েছেন সাড়ে সাতশ।

উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি এবং দক্ষিণে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে ২৫টি।

সর্বশেষ ঢাকার দুই ভাগে ভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগের পর এটাই দ্বিতীয় নির্বাচন।  এর আগে একক সিটি করপোরেশন হিসেবে ঢাকা মহানগরে নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে।

তিন পদে প্রার্থী সাড়ে সাতশ’

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন লড়ছেন।

পদ: সিটি করপোরেশনের মেয়র ১, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫৪ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৮টি।

ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮২ জন প্রার্থী।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দুইজন সাধারণ কাউন্সিলর এবং দুইজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।

পদ: সিটি করপোরেশনের মেয়র ১, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৭৫ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২৫টি।

মেয়র পদে কার কী প্রতীক

ঢাকা উত্তর সিটি

 

 

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি

 

 

প্রার্থী

দল

প্রতীক

 

প্রার্থী

দল

প্রতীক

আতিকুল ইসলাম

আওয়ামী লীগ

নৌকা

 

শেখ ফজলে নূর তাপস

আওয়ামী লীগ

নৌকা

তাবিথ আউয়াল

বিএনপি

ধানের শীষ

 

ইশরাক হোসেন

বিএনপি

ধানের শীষ

আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল

সিপিবি

কাস্তে

 

সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন

জাতীয় পার্টি

লাঙ্গল

শেখ ফজলে বারী মাসউদ

ইসলামী আন্দোলন

হাতপাখা

 

আব্দুর রহমান

ইসলামী আন্দোলন

হাতপাখা

আনিসুর রহমান দেওয়ান

এনপিপি

আম

 

বাহারানে সুলতান বাহার

এনপিপি

আম

শাহীন খান

পিডিপি

বাঘ

 

আব্দুস সামাদ সুজন

গণফ্রন্ট

মাছ

 

 

 

 

আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ

বাংলাদেশ কংগ্রেস

ডাব

পাঁচ বছর আগের প্রার্থী সংখ্যা (২০১৫)

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৮১ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৯ প্রার্থী ছিলেন।

দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯০ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

দুই সিটিতে ভোটার ৫৪ লাখের বেশি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

২০১৫ সালে ঢাকা উত্তরে ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪  জন এবং ঢাকা দক্ষিণে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ ভোটার ছিল।

ভোটকেন্দ্র প্রায় আড়াই হাজার, ভোট কক্ষ ১৪ হাজারেরও বেশি

ঢাকা উত্তরে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি।

ঢাকা দক্ষিণে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮৮টি।

২০১৫ সালে ছিল ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ৯৩টি এবং দক্ষিণে ৮৮৯টি ভোটকেন্দ্র ছিল।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ৫০ হাজারেরও বেশি

ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম এবং দক্ষিণে ইসির যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেন।

দুই সিটিতে রিটার্নিং অফিসার মোট ৪৩ জন (উত্তরে ১৮ জন ও দক্ষিণে ২৫ জন) সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে এবারের সিটি নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এছাড়া উত্তরে ২১ জন সহায়ক কর্মকর্তা এবং দক্ষিণে ২৮ জন সহায়ক কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও দুইজন পোলিং অফিসার দায়িত্বে থাকবেন।

দুই সিটিতে সব মিলিয়ে ২৪৬৮ জন প্রিজাইডিং আফিসার, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং আফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।

সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।

ইভিএম কারিগরি টিম: দুই সিটি ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিকেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

২০১৫ সালে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা লেগেছিল প্রায় ৩৫ হাজার।

আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য অর্ধ লাখ

ভোট সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্য মাঠে থাকছেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমদের নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন সদস্যদের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনী এলাকায় টহলে থাকবেন। আর পুলিশসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা থাকবেন কেন্দ্রে কেন্দ্রে।

দুই সিটিতে ভোটের দায়িত্বে থাকবেন অর্ধ লক্ষের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন শুক্রবার বিকালে তেজগাঁও অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে টহলে বের হচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

নিরাপত্তা সদস্য:
কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্য থাকছে ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে  ১৮ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবে।

মোবাইল ফোর্স: পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল টিমে থাকবেন ১ হাজার ২৯০ জন।

স্ট্রাইকিং ফোর্স: স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৪৩টি টিমে থাকবেন ৪৩০ জন।

রিজার্ভ: রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৫২০ জন।

র‌্যাব: দুই সিটিতে র‌্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম দায়িত্ব পালন করবে। গড়ে ১১ জন করে এতে মোট ১ হাজার ৪৩০ জন র‌্যাব সদস্য থাকবেন।

রিজার্ভ: দুই সিটিতে র‌্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, তাতে ১১০ জন সদস্য থাকবেন।

বিজিবি: রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন করে মোট ২ হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন ভোটের দায়িত্বে।

হাকিম:  ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই সিটিতে থাকবেন ১৭২ জন নির্বাহী এবং ৬৪ জন বিচারিক হাকিম।

২০১৫ সালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৪২ হাজারেরও বেশি সদস্য ছিল ঢাকার দুই ভাগে। তবে সেবার সেনা সদস্যদের ব্যারাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

প্রায় ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত

দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে তিনটি ব্যালটে ভোট হবে। ভোটের আগের দিন সব সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।

প্রতিটি কক্ষে অতিরিক্ত ইভিএমও মজুদ থাকবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন শুক্রবার বিকালে ফার্মগেইট এলাকায় বিজিবি সদস্যদের টহল। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সব মিলিয়ে ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখবে নির্বাচন কমিশন। ভোট সামনে রেখে সব কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনী ও মক ভোটিং করা হয়েছে।

দুই সিটি ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতি কেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রায় ১২০০, সাংবাদিক কয়েক হাজার

২২টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক ভোট দেখবেন। এরমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে এসব সংস্থার ৫০৩ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫৭ জন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আরও ৫৩ জন পর্যবেক্ষক রয়েছেন।

ঢাকায় ১০ দেশের দূতাবাসের ৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখার কথা রয়েছে।

এছাড়া গণমাধ্যমের কয়েক হাজার সাংবাদিক কার্ড সংগ্রহ করেছেন।

ভোটে ব্যয় প্রায় ৬০ কোটি টাকা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোট সারতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে দুই সিটির নির্বাচন পরিচালনায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা, আইন-শৃঙ্খলা খাতে ‘পরিস্থিতি বিবেচনায়’ ২২ থেকে ২৫ কোটি টাকা এবং প্রশিক্ষণ খাতে অন্তত ১৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে। ভোট শেষে সব ব্যয় সমন্বয় করে এবার খরচ দাঁড়াতে পারে ৬০ কোটি টাকার মতো।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনে উত্তর ও দক্ষিণে পরিচালন ব্যয় ছিল ৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর আইন-শৃঙ্খলাসহ সব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২০ কোটি টাকা।

সম্ভাব্য ব্যয় (এ বরাদ্দ বাড়তে পারে): ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমদের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা,  মনিহারি দ্রব্যের (ভোটে ব্যবহৃত খুচরা উপকরণ) জন্য ১ কোটি টাকা,  জ্বালানি ও পরিবহনের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জন্য ২৫ লাখ টাকা,  কারিগরি টিমের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা এবং  আইনশৃঙ্খলা খাতে দুই সিটিতে ২২-২৫ কোটি টাকা।

ফল ঘোষণা যেখানে

ঢাকা উত্তর সিটি করপোশন নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে শেরেবাংলা নগরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কেন্দ্রের ভোটের ফল সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে।

বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রভিত্তিক  ভোট গণনা ও কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করবেন প্রিজাইডিং অফিসার। এরপর রিটার্নিং অফিসার একীভূত তথ্য নিয়ে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করবেন।

ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম এবং দক্ষিণে ইসির আরেক যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেন।

তফসিল

২২ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২ জানুয়ারি হয় মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময়। ভোটের তারিখ ছিল ৩০ জানুয়ারি।

পূজার কারণে আন্দোলনের মুখে ভোট পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে কমিশন। এরজন্য দুদিন পেছানো হয় এসএসসি পরীক্ষাও।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরাপদে ভোট হবে, সেই আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

ভোটের আগের দিন তিনি বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে ভোটারদের আহ্বান জানাব- আগামীকাল (শনিবার) আপনারা যেন প্রত্যেকেই ভোটকেন্দ্র যান।”