রোহিঙ্গা: চীন-ভারতসহ ৪ দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর সুপারিশ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2020, 05:03 PM
Updated : 28 Jan 2020, 05:03 PM

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) দেওয়া আদেশে এখনও বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান না নেওয়া দেশগুলো কিছুটা হলেও নমনীয় হবে বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে আইসিজের আদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আদালতের এই আদেশকে কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানানো হয়।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) রায় ‘বাংলাদেশের পক্ষে’ আসায় ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে দেশগুলোকে চিঠি দেবেন বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন কোন দেশ বাংলাদেশের বিপক্ষে রয়েছে তা নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ধরনের ১২ থেকে ১৪টি দেশ চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈঠকে কমিটি এই দেশগুলোর সাথে আরও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে বলেছে।

জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি, যে দেশগুলো সরাসরি আমাদের পাশে ছিল না এই রায়ের ফলে কিছুটা হলেও আমাদের জন্য নমনীয় হবে। আমরা এই দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করতে বলেছি।

“ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়া- এই চারটি দেশের সাথে আমাদের ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বলেছি, তাদের কাছে গিয়ে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে।”

ফাইল ছবি

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চীন তার অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় (বাংলাদেশ, মিয়ানমার-চীন) তৃতীয় বৈঠক হয়েছে সেখানে চীন মিয়ানমারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছে।”

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল গত ২৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে হবে।

রায়ের পরে মিয়ানমারের অবস্থানও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন কমিটির সভাপতি ফারুক খান।

তিনি বলেন, “আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি মিয়ানমার এই রায় প্রত্যাখ্যান করলেও তাদের আচরণে কিছুটা নমনীয়তা দেখা গেছে। তারা বিষয়টিকে একেবারেই নাচক করে দেয়নি। তারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলে এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধ হয়েছে। তারা যতটা স্বীকার করেছে তা এক ধরনের মেনে নেওয়ার মধ্যেই পড়ে।

“আর যে আদালতে এই রায় হয়েছে সেটা ইউএন বডি। ফলে তারা রায় বাস্তবায়ন না করলে এর সূত্র ধরে এটা নিরাপত্তা কাউন্সিলে তোলা সহজ হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসবে। আমরা অবশ্য বলেছি, এই রায়ের সূত্র ধরে আরকে দফা নিরাপত্তা কাউন্সিলে যাওয়া যায় কি না।”

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সম্প্রতি তারা দূতাবাস অ্যাপ চালু করেছেন। এই অ্যাপ থেকে ৭০ ধরনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এখানে দুই হাজারের মতো তদন্ত পড়েছে। এর বেশিরভাগই সনদ প্রত্যায়ন। এর ফলে জনগণ ঘরে বসেই সুবিধা পাচ্ছে।

এদিকে কমিটির আগের সুপারিশ অনুসারে প্রবাসী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে আগামী মাসে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথ সভা করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সভার আয়োজন করবে। এরপর মার্চ বা এপ্রিলে এই তিন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও একই ইস্যুতে বৈঠক করবে।

বৈঠকে কমিটি করোনাভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত ও নাহিম রাজ্জাক অংশ নেন।